গ্রেপ্তার ৯ ডাকাত। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

নাটোর জেলার বড়াইগ্রামে ট্রাকে হামলা চালিয়ে গরু বিক্রির ১৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে এক ব্যাপারীকে হত্যার ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নাটোর জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান পিপিএম আজ ২ জুলাই তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। সেখানে তিনি এই মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেপ্তার, লুণ্ঠিত টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২৫ জুন গরুর ব্যাপারী মো. নূর আলম (২৬), আব্দুস সালাম, মো. রেজাউল করিম, মো. শহিদুল ইসলাম মিয়া, মো. ইউনুছ আলী মিলে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে মোট ১৫টি গরু নিয়ে বগুড়া থেকে থেকে ভাড়া করা ট্রাকে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে ঢাকার পশুর হাটে যান। গরুগুলো বিক্রি করে তারা মোট ১৪ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকা পান। এরপর ২৭ জুন
বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। অপেক্ষমান অবস্থায় একটি ত্রিপলবেষ্টিত ট্রাকের হেলপার কাছে এসে গাড়ি থামিয়ে ব্যাপারীদে কাছে জানতে চান তারা কোথায় যাবেন। ব্যাপারীরা জানান যে তারা বগুড়া যাবেন। হেলপার বলেন তারাও গরুর ব্যাপারীদের নিয়ে রংপুর যাবেন। এরপর ব্যাপারীরা জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে ওই ট্রাকের পিছনে উঠে বসেন। ট্রাকটি চান্দুরা এলাকায় আসার পর আগে থেকে ট্রাকে থাকা অজ্ঞাতনামা লোকেরা নিজেদেরকে ডাকাত বলে পরিচয় দিয়ে ব্যাপারীদের আক্রমণ করে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান ও তাদের কাছ থাকা গরু বিক্রির টাকা না দিলে খুন করবে বলে হুমকি দেন। একপর্যায়ে ডাকাতদল ব্যাপারীদের কাছে থাকা গরু বিক্রির টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাপারীরা টাকা দিতে না চাইলে ডাকাতদলের সদস্যরা তাদের জাপটে ধরে গামছা ও লুঙ্গি দিয়ে তাদের দু-হাত, দু-পা বেঁধে ফেলেন ও মুখে স্কচটেপ দিয়ে আটকে ট্রাকের ভেতর ফেলে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতারি প্রহার করে শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম করেন এবং গরু বিক্রির টাকাসহ মোট নগদ ১৪ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ভিকটিমদের ৪টি মোবাইল ফোন লুট করেন। কিন্তু ভিকটিম শহিদুল ইসলাম ওই সময় ডাকাতদের তার কাছে থাকা গরু বিক্রির টাকা দিতে না চাইলে ডাকাতরা তাকে মারধর করে তার বাম পাঁজর, মুখ ও ঘাড় জখম করেন এবং গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ডাকাতদল শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ সুবিধাজনক স্থানে ফেলতে না পেরে সারারাত ও সারাদিন ট্রাকে করে ঘুরতে থাকে। ২৮ জুন রাত আনুমানিক ৯ টার সময় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের মান্নান নগর হতে চাটমোহর গামী রাস্তায় হান্ডিয়াল নামক স্থানে ভাঙ্গা ব্রিজের ১০০ গজ সামনে হিজল গাছের নিচে চলন্ত ট্রাক থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আ. সালামকে ফেলে দেন। এরপর ডাকাতদল বড়াইগ্রাম থানাধীন বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে আগ্রান ফিলিং স্টেশনের পশ্চিমে ৮নং ব্রিজের কাছে পাকা রাস্তার উত্তর পাশের ঢালে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শহিদুলের মৃতদেহ এবং ভিকটিম মো. নূর আলম, মো. রেজাউল করিম, মো. ইউনুছ আলীকে ফেলে দেয় এবং ট্রাক নিয়ে চলে যায়।

এ ঘটনায় ২৯ জুন বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন আব্দুস সালাম। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই (নিরস্ত্র) মো. আকরামুজ্জামানকে নিযুক্ত করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখছেন নাটোর জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান পিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

এরপর তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়
এবং নাটোর জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাতদলের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ইনদাদুল (২৭), মো. আরিফ (২৫), মো. মিঠুন (২৮), মো. শাহ আলম (২৪), মো. রুবেল (৩২), মো. সোহাগ (২৫), মো. সুজন (৩০),মো. রেজাউল (৩৫), মো. রসুল (৩২) ডাকাতদলের সদস্যদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি ট্রাক, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ও ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, ব্যাপারীদের কাছ থেকে লুট করা ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।