পুলিশের সহায়তায় মা ও সন্তানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো

ফুটপাতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। আশপাশের অনেকেই তাঁকে দেখেছেন, তবে কাছে গিয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। প্রথমে ওই নারী পাশের বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাহায্য চান। তাদের সাহায্য না পেয়ে তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হন। পরে পুলিশের সহায়তায় ফুটপাতেই ছেলেসন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। মা ও সন্তান এখন হাসপাতালে ভর্তি।

চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকায় সোমবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সন্তানকে জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। সন্তানেরও ওজন কম। পুলিশ বলছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা ও সন্তানের ওষুধ, অন্যান্য খরচ তারা দেবে। খবর প্রথম আলোর।

কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, রাতে তাঁরা টহলে ছিলেন। থানা থেকে জানানোর পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন ওই নারী। পার্শ্ববর্তী বেসরকারি একটি হাসপাতাল থেকে নার্সদের ডেকে আনা হয়। এর মধ্যে সন্তানটির জন্ম হয়ে যায়। প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় ওই নারীকে সন্তানসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাতে ভর্তি করা হয়।

ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানান এসআই মোস্তফা কামাল। তিনি আরও বলেন, রাতে দুই ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে ওই নারীকে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির ওজন কম থাকায় তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। মা ও ছেলে দুজনের ওষুধ খরচসহ সবকিছু দেখভাল করা হচ্ছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রান্ত শর্মা। তিনি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রান্ত শর্মা বলেন, জামালখান মোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা শেষে আন্দরকিল্লায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। তখন ফুটপাতে এক নারীকে চিৎকার করতে শোনেন। একটু কাছে গিয়ে দেখেন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আশপাশে আরও লোকজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসছেন না। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল দেন। পার্শ্ববর্তী বেসরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা ওই সময় কেউ সাড়া দেয়নি। ইতিমধ্যে ওই নারীর সন্তান প্রসব হয়।

প্রান্ত শর্মা বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী তাঁর নাম–ঠিকানা বলতে পারছেন না। জামালখান এলাকার কেউ তাঁকে চেনেন না। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, মা ও ছেলে দুজন পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ পাশে থাকবে।

২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় আকবর শাহ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর নগরের কর্নেলহাট এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করেছিলেন।

একুশের প্রথম প্রহরের আগে শিশুটিকে উদ্ধার করার কারণে নাম রাখা হয়েছিল ‘একুশ’। পরে আদালতের মাধ্যমে একুশকে এক দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে শিশুটি তাঁদের কাছে লালিত–পালিত হচ্ছে। এরপর আরও সাতটি শিশু উদ্ধার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের দত্তক নেন নিঃসন্তান দম্পতিরা।