
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে জনগণের সেবক হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, পুলিশকে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ মানুষের আস্থা অর্জন করবে, এটাই আমরা চাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ এপ্রিল (রোববার) সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি মুজিববর্ষে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি মানবিক উদ্যোগ দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক এবং গৃহহীনদের জন্য নির্মিত গৃহ হস্তান্তর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এ আহবান জানান। বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান বিপিএম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম রাজারবাগ প্রান্তে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বক্তব্য দেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনস প্রান্ত থেকে যুক্ত হয়ে রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, র়ংপুরের পীরগঞ্জ থানা থেকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, মাগুরা সদর থানা থেকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মুহিদ উদ্দিন বক্তব্য দেন। সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত নারী পুলিশ সদস্যরা এবং সার্ভিস ডেস্ক থেকে সেবা পাওয়া সুবিধাভোগী ও গৃহ পাওয়া উপকারভোগীরা বক্তব্য দেন। অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের সকল থানা ও পুলিশ লাইনস প্রান্ত ওয়ানওয়ে সংযুক্ত থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক হবে, পুলিশের কাছে গেলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, এ আত্মবিশ্বাস মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তিনি থানায় সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করেছি। সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়, সে লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য ছিল, যে কাজ জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। এর সুফল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর করে দেওয়ার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জনগণের পুলিশ। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশেই থাকবেন এটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি সততার সঙ্গে কাজ করে যেতে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হেল্প ডেস্কে যাঁরা কাজ করবেন তাঁদেরকে প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে বাহিনী জনগণের বাহিনী, তাকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলব।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক চালুর মাধ্যমে দেশের জনগণের কল্যাণে আরও একটি মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে সার্ভিস ডেস্ক স্থাপনের কাজ সুসম্পন্ন করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০০ গৃহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন এবং গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ বাংলাদেশ পুলিশের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়, উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। তিনি বলেন, পুলিশ দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য অবদান রাখছে। করোনাকালে পুলিশের ভূমিকা বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল আত্মপ্রত্যয়ী এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যিনি নিজ কর্মের উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে সারা বিশ্বে এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গণমানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন ইস্পাতকঠিন, অকুতোভয় এক সংশপ্তক। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এক মহান রাষ্ট্রনায়ক; মুক্তি ও মানবতার এক প্রোজ্জ্বল বাতিঘর।
আইজিপি বলেন, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলব’। বঙ্গবন্ধুর এ দর্শন ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করেছে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় দেশে প্রণীত সকল আইন ও নীতিমালার আলোকে মুজিববর্ষের সূচনালগ্ন ২০২০ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ ডেস্কের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জন সেবাগ্রহীতাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৯৬৮ জন এবং প্রতিদিন গড়ে ৪৬৫ জন সেবাগ্রহীতা এ ডেস্ক থেকে সেবা গ্রহণ করেছে।
আইজিপি বলেন, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজের অভিন্ন অংশীজন। তাদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। মুজিববর্ষ উপলক্ষে থানায় থানায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্ক পুলিশের সেবার পরিধিতে নিঃসন্দেহে একটি নতুন ধারার সূচনা করবে।
পুলিশ প্রধান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মার আত্মীয়। তিনি ছিলেন এ দেশের মাটিলগ্ন মানুষের একান্ত আপনজন। তিনি বাংলার মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন’। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন।
আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ প্রত্যয় বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে সারা দেশে ৫২০টি থানায় একটি করে গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
পরে দেশ ও জনগণের কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে সার্ভিস ডেস্ক এবং গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘোষণা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে পুলিশ গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কাল ৪০০টি গৃহ হস্তান্তর করা হবে। ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের দৃষ্টিনন্দন প্রতিটি গৃহ পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গৃহহীন পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও উপার্জনে অক্ষম, অতিবৃদ্ধ ও পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য নেই, এমন পরিবার অথবা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল পুলিশ। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সেসব পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় কিছু অর্থ বেঁচে যায়। সেই অর্থ দিয়ে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আবাসন কার্যক্রমে শামিল হয় বাংলাদেশ পুলিশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করা হয়েছে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক। দেশের ৬৫৯টি থানায় একটি বিশেষ কক্ষ নির্মাণ অথবা প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সার্ভিস ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। সার্ভিস ডেস্ক কর্মকর্তা থানায় আগত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা মনোযোগসহকারে শুনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করে থাকেন।
মুজিববর্ষের সূচনালগ্ন ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সার্ভিস ডেস্ক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৭৬ জন নারী, ৩২ হাজার ২৮৬ জন শিশু, ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩২৫ জন পুরুষ এবং ১১ হাজার ৮১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, মোট ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে এই ডেস্ক থেকে।