ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড়। ছবি: সমকাল

গোপালগঞ্জে দুর্বৃত্তের ছোড়া বোমায় চার বছর বয়সী সন্তানসহ এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদেরকে প্রথমে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত ব্যক্তিরা হলেন মাসুদ শেখ (৪৫) ও তাঁর ছেলে আব্দুল রাশেদ শেখ (৪)। খবর সমকালের।

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের ঘোষেরচর উত্তরপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুল কবির চন্দনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন টিম কাজ করছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আহত মাসুদ শেখ ঘোষেরচর উত্তরপাড়া গ্রামের মন্টু শেখের ছেলে। তিনি গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাপ্রহরী।

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাপ্রহরী মাসুদ শেখ রাত ৯টার দিকে ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে গোপালগঞ্জ শহর থেকে বাড়ি পৌঁছান। এ সময় ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত তাঁদের লক্ষ্য করে শক্তিশালী দুটি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা বিস্ফোরণে বাবা-ছেলে দুজনেই গুরুতর আহত হন। বোমা হামলায় তাঁদের শরীরের প্রায় ৩০ ভাগ পুড়ে গেছে।

বোমা বিস্ফোরণের শব্দে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাঁদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত মাসুদের ভাবি ফরিদা বেগম বলেন, ‘রাতে আমরা ঘরে ভাত খাচ্ছিলাম। এ সময় লোডশেডিংয়ে অন্ধকার হয়ে যায়। বিকট শব্দে শুনে ঘর থেকে দৌড়ে বের হই। এসে দেখি মাসুদ ও তাঁর ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ওপর পড়ে আছে। একটু পাশে তাঁর মোটরসাইকেল পড়ে আছে, মোটরসাইকেল থেকেও আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ঘরের দরজায় বড় ছিদ্র হয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক গাজী মো. আশিকুজ্জামান বলেন, ‘মাসুদ শেখের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়েছে। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে ও হাড় ভেঙে গেছে। পেটে বড় ইনজুরি রয়েছে। আমার ধারণা, তাঁর পেটের মধ্যে কিছু রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে অপারেশন করিয়ে পেট থেকে সেটা বের করতে হবে। এ ছাড়া মাসুদের শরীরের ৩০ শতাংশ ও ছেলের শরীর ২৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। মাসুদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে ছেলে আব্দুল রাশেদ শঙ্কামুক্ত। তাঁদের দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুল কবির চন্দনসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন টিম কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আহত পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। তারপরও আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে অভিযান শুরু হয়েছে। দ্রুত আমরা এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারব।’