দেশের ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র জানানোর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার আলোচনার প্রেক্ষাপটে গতকাল রোববার দুপুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। সভা শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। খবর বাসসের।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০২৩ সালে কঠিন সময় যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে এটা বলা হয়েছে। চীনে ও রাশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। এ জন্য সংকট আসবে। তিনি আরও জানান, খাদ্য, সার ও জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভোগ্যপণ্য, ফল—এসব ক্ষেত্রে খরচ কমাতে বলেছেন। প্রয়োজন ছাড়া প্রকল্প করা যাবে না। বিদেশি সাহায্য বা ঋণে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। নিজেদের খরচের প্রকল্পে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বৈঠকে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সচিব আরও বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয়, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত, আমদানি ইস্যুতে ব্যয় সংকোচন, বিদেশি ঋণের টাকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ঠিকভাবে করা, সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করাসহ এক গুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সচিবদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসার জন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যাতে অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ে, সে জন্য সচিবদের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে সচিব সভার আগে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিকারের সভায় ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা স্থগিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জঙ্গিরা যেন কোনোভাবেই কারও কোনো আশ্রয় বা সহায়তা কিংবা কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে জঙ্গির বিষয়ে একটু বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশ কিছু জঙ্গিকে চিহ্নিত (ডিটেক্ট) করেছে এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি কিছু পালিয়ে গেছে। তাদের বিষয়ে সবাইকে দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভায় গত বুধবার আলোচনা করে অনেক উদ্যোগ (ইনিশিয়েটিভ) নেওয়া হয়েছে। এখনো ধরা না পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেগুলো তো আর খোলামেলা (ওপেনলি) আলাপ করা যাবে না। এ নিয়ে বুধবার আমরা সব সংস্থাসহ বসেছিলাম।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিলাসবহুল পণ্য ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি সেসব পণ্য আমদানি কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে যদি সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরে, তাহলে মানুষ জানতে পারবে যে কী কী কাজ আপনারা (সচিব) করলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন ১৬ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। সংকট যেন না হয়, এ জন্য আমদানি ও উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান থাকবে। এতে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, দেশে জ্বালানি সংকট আছে। ব্রুনাই থেকে আগামী বছর সিএনজি পাওয়া যাবে বলে নিকার সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন। এটা পাওয়া গেলে খাদ্য, সার ও জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।