ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণকে নিরপেক্ষভাবে সেবা প্রদানের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স‌‌‌ থেকে পুলিশের সব মেট্রোপলিটন কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় এই নির্দেশ দেন আইজিপি।

পুলিশপ্রধান বলেন, মানুষ পুলিশের সেবা পেতে প্রথম থানায় আসে। থানার দরজা কখনো বন্ধ হয় না। আমরা থানাকে মানুষের সেবা প্রাপ্তির প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপিগণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

করোনাকালে চরম বিপর্যয়ের সময় মানবিক পুলিশিংয়ের উদাহরণ দিয়ে আইজিপি বলেন, তখন পুলিশ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেবা দিয়েছে, তা জনগণ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আগামীতেও পুলিশ সদস্যদের আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সেবার এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার ’জনগণের পুলিশ’ হিসেবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে আমাদেরকে অতীতের ন্যায় অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ এখন ’রোল মডেল’। জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের কার্যক্রম আগামীতে আরও জোরদার করতে হবে।

আইজিপি বলেন, কিছু পুলিশ সদস্যের বিচ্যুত আচরণের জন্য পুলিশের সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তা কোনোভাবেই করা যাবে না। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজ অথবা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ’জিরো টলারেন্স’।

পুলিশপ্রধান বলেন, পুলিশের নিয়োগ-পদোন্নতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা বেড়েছে। এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক উন্নত। এটা ধরে রাখতে হবে। সবাই মিলে একযোগে একসঙ্গে কাজ করে বাহিনীর মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ দেন আইজিপি।

তিনি বলেন, পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তথ্য-প্রযুক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মামলা তদন্তে প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়ানো হবে।

পুলিশ সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কল্যাণের পাশাপাশি শৃঙ্খলাও শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

আইজিপি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা করলে, তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে অনেক এগিয়েছে। ২০৪১ সালের উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব।

আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব শহীদ সদস্য, সব মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে রাজারবাগে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন আইজিপি।