রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৫ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।

র‌্যাব বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে তাঁরা এ আইস নিয়ে আসে। বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। আচার ও চায়ের আড়ালে এ ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হতো। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

গতকাল শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘অভিযানে প্রায় ৫ কেজি ৫০ গ্রাম ভয়ংকর মাদক আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাঁদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, দুটি মোবাইল, তিনটি দেশি-বিদেশি সিম কার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫-এর একটি আভিযানিক দল শনিবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাঁদেরকে গ্রেফতার করে।’

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদ্রোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা ও মানসিক অবসাদ এবং বিষণ্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।’

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এ মাদকে আসক্ত হয়ে তরুণ-যুবকেরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এ চক্র কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। সিন্ডিকেটে ২০-২৫ জন যুক্ত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণত নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে আসে।
তিনি আরও বলেন, চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে কয়েক মাস ধরে আইস নিয়ে আসছিল। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে। সম্প্রতি টেকনাফকেন্দ্রিক কয়েকটি মাদক চক্র পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য আইস বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। ফলে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশিচৌকি থাকলেও গ্রেফতার এ আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়কপথে নিয়ে আসে। এরপর তারা চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে আসে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সিন্ডিকেটে যে ২০-২৫ জন রয়েছে, তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’