৯ বছর পর অবশেষে খুলনার কয়রায় পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় ৩৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনা। খবর জাগো নিউজের।

এই মামলার দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাঁদেরকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যও রয়েছেন।

৩১ মে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল লতিফ।

৯ বছর আগে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল মো. মফিজুল ইসলাম। খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালী গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন গণি সরদার, আনারুল, সিরাজুল, আয়শা, মফিজুল ইসলাম নান্নু ওরফে নান্নু, রেজাউল ইসলাম, মজিদ গাজি, হাকিম মোড়ল, মহিউদ্দিন মোড়ল, আব্দুল হাকিম গাজি, আত্তাপুর জামাল ঢালী, হালিমা, সুমাইয়া খাতুন, নাজমুন্নাহার, ওলিউর রহমান, মইনুল ইসলাম লিটন, আলমগীর হোসেন, সাইদুল হোসেন, সাইদুল ইসলাম, মো. ওহিদুজ্জামান খোকন, মো. মিজানুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, সবুর মোল্লা, কবিরুল সরদার, রুহুল আমিন সরদার, নাসের আলী মোড়ল, ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, তাইজুল গাজি, তাহেল আলী মোড়ল, দাদরিজ শেখ, মো. সিরাজুল গাজী, নাজমুল ইসলাম ও পরিতোষ কুমার মণ্ডল।

আসামিদের মধ্যে রশিদ সরকার ও রাবেয়া খানম মারা যাওয়ায় তাঁদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ।

চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কনস্টেবল মো. মফিজুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় আংটিহারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মমিনুর রহমান বাদী হয়ে কয়রা থানায় মামলা করেন। কয়েক দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর ২০১৫ সালের ২১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সরদার মো. হায়াত আলী। এরপর দীর্ঘদিন থেমে ছিল মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়রা থানার অপর একটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি গনি সরদারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ গনি সরদারের বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই মামলার বাদী নূরুল আমীন মোড়লের চাচাতো ভাই নাছের আলী মোড়ল, আছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, তাইজুল গাজী, দাদরিজ শেখসহ কয়েকজন হাজির হন। তাঁদের সাথে থাকা আসামি পরিতোষ কুমার মন্ডল বন্দুক ও গুলি, লাঠিসোঁটা, হাতুড়িসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গনি সরদারকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর স্কুলপড়ুয়া শিশুসন্তান সিরাজুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন বাড়ির নারী ও শিশুরা চিৎকার শুরু করলে গোলখালী গ্রামের সাধারণ জনগণ সমবেত হয়ে প্রতিরোধ করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এসব চিৎকার শুনে ওই পুলিশ ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকালে তদন্তে প্রকাশিত আসামিরা পুলিশ ফোর্সের পেছনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।

ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশের পেছনে অবস্থান নেওয়া আসামিদের মধ্যে রউফ শেখ অপর আসামি আছের আলীর কাছে থাকা বন্দুক দিয়ে গুলি করলে কনস্টেবল মফিজুল ইসলামের বাম পায়ের হাঁটুর পেছনে বিদ্ধ হয়, এতে মারাত্মক জখম হন তিনি। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মনিটরিং সেলের ১৭৭তম এবং ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল ১৭৯তম সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে প্রত্যেক আসামির অপরাধ শনাক্ত করে সুনির্দিষ্ট চার্জ এনে অভিযোগপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফ জানান, মামলাটি উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ছিল। পরে আবারও তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। তদন্ত শেষে গত ৩১ মে চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত ৩০ মার্চ সিআইডির চার্জশিটভুক্ত এক আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।