তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষভাবে উপকার করে। বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের চিলারং ইউনিয়নের ৬৭ বছরের ইমাম মো. খোরশেদ আলী। পরিবেশসচেতন এই মানুষটি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর ৫ হাজার করে তালবীজ বপন করে আসছেন, বর্তমানে তাঁর পরিচর্যায় ৩৫ হাজারের বেশি তালের চারা রয়েছে। খবর বাসসের।
খোরশেদ আলী পেশায় একজন পল্লিচিকিৎসক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে চিলারং ইউনিয়নের রেলঘন্টি থেকে আখানগড় রেলস্টেশন পর্যন্ত বীজ রোপণ করা সাড়ে ৩ হাজার গাছ একটু দৃশ্যমান। এই গাছ রোপণ করতে গিয়ে তিনি তাঁর পৈতৃক কৃষিজমি বিক্রি করেছেন। তবু তিনি থেমে থাকেননি। তালের আঁটি সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তালবীজ সংগ্রহ করতে এতে অনেক শ্রম ও শ্রমিক লেগেছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদসুকা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং কাদসুকা ব্রিজ থেকে চৌরঙ্গী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের দুধারে এ মহাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি টাকার হিসাব প্রকাশ করতে চাননি। খোরশেদ আলী বলেন, ‘মানুষের চলার পথে টাকাপয়সা বড় কথা নয়। মানুষের মধ্যে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ৭ বছর ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তালবীজ বপণ করেছি। নিয়মিত গাছ পরিচর্যার জন্য তিনি পাহারাদার রেখেছেন।’
খোরশেদ আলী আরও বলেন, ‘প্রতিবছর রাস্তায় ৫ হাজার করে তালবীজ বপণ করেছি। এ কাজে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষাধিক তালের চারা লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করতে চান বলে জানালেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, খোরশেদ আলীর কাজ সারা দেশে অনন্য নজির হয়ে থাকবে। খোরশেদ আলীর মতো তালসহ অন্যান্য গাছ লাগাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, তালগাছের অবস্থান প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য অবদানস্বরূপ। তা ছাড়া তালগাছ বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে বিশেষভাবে উপকার করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ইমাম মো. খোরশেদ আলী। তাঁকে সাধুবাদ জানানো উচিত।
এমন মহৎ উদ্যোগ নেওয়ায় খোরশেদ আলীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া জেলা পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ রকম শ্রম দিয়ে দেশের সেবা করার মতো মানুষের আজ খুবই অভাব। ইমাম মো. খোরশেদ আলীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এই কাজে তাঁকে পুরস্কৃত করা উচিত আমাদের। ’
