পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার ৬ আসামি। ছবি : সংগৃহীত

একটি ছিনতাই চক্র প্রায় ৩ বছর ধরে আনুমানিক ২৫০টির বেশি ইজিবাইক ও অটোরিকশা চুরি করে আসছিল।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের নৈপুণ্যে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছিনতাই চক্রের ৬ জন সদস্যকে।

পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম এ খবর জানিয়েছেন। খবর যুগান্তরের।

যেভাবে গ্রেপ্তার
মনিরুল ইসলাম জানান, ৬ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার নরসিংহপুর কাউয়াপাড়ার জাহাঙ্গীরের গ্যারেজ থেকে মিশুক নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন চালক আব্দুল কুদ্দুস। এ বিষয়ে তাঁর স্ত্রী রীনা খাতুন একটি মামলা করেন এবং পিবিআই মামলটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার, নীলফামারীর ডিমলা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে বন্দরের শাহ আলম (৩৮), সিদ্ধিরগঞ্জের হালিম (৪২), পিরোজপুরের মো. শহিদুল (৩২), বরগুনার বাদশা (৪৭), সোনারগাঁয়ের মো. আসলাম (৩০) ও মো. মনিরকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্রসহ ৫টি চোরাই অটোরিকশার গ্যারেজের সন্ধান মিলেছে।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার আসামি শাহ আলমের কাছ থেকে নিখোঁজ মিশুক চালক কুদ্দুসের মোবাইল এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা একটি ডাবল ডেগার (সুইচ গিয়ার চাকু) জব্দ করা হয়। এরপর তাঁর দেওয়া তথ্যমতে বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তাঁরা মূলত ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় অটোরিকশা-ইজিবাইক, অটোমিশুক ছিনতাই করে।

যেভাবে করা হয় ছিনতাই
পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার জানান, বেশ পরিপাটি হয়ে অটোরিকশার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ভদ্রলোক। একটি অটোরিকশা থামতেই তিনি উঠলেন আর বাড়ির প্রধান ফটকে থাকা দারোয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন।
একটু পরেই দারোয়ান ফিরে এলে রাগ করে বললেন, কেন গেট খোলা রেখে সে পাশের দোকানে গিয়েছিল। বকা দেওয়ার পর তিনি অটোরিকশার চালককে গন্তব্যে যেতে বললেন। ২-৩ মিনিট যাওয়ার পরই ওই ভদ্রলোকের মোবাইলে ফোন আসে এবং তিনি জরুরি কাগজ ফেলে এসেছেন বলে জানায়।

অটোরিকশার চালককে বললেন সেই দারোয়ানের কাছ থেকে কাগজপত্রগুলো নিয়ে আসতে। চালক তাঁর বাহনটি রাস্তার পাশে রেখে গিয়ে দেখেন দারোয়ান সেখানে নেই। একটু পর এসে দেখলেন সেখানে ওই বাড়ির মালিকও নেই, তাঁর অটোরিকশাটিও নেই।
মূলত বাড়ির মালিক আর দারোয়ান সেজে অভিনয় করা ওই দুজনই ছিলেন অটোরিকশা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য।
শুধু এমন কৌশলই নয়, এই চক্রে রয়েছে ভয়ঙ্কর খুনিও। যারা চালককে খুন করেও ছিনিয়ে নেয় অটোরিকশা, ইজিবাইক বা সিএনজি অটোরিকশাও।

পুলিশ সুপার জানান, প্রথমত তাঁরা কোনো বাড়ির মালিক ও দারোয়ান সেজে অটোরিকশা বা সিএনজি চুরি করে। এ ছাড়া তারা যে অটোরিকশাটি টার্গেট করে সেখানে কোট-টাই পরে সাহেব হিসেবে অটোরিকশার যাত্রী সাজে, অন্য আরও দুজন সাহেবের বন্ধু হিসেবে অটোরিকশায় উঠে চালকের চাহিদামতো ভাড়ায় রাজি হয়ে চক্রের পূর্বপরিকল্পিত স্থানে যেতে বলে।

পথিমধ্যে তাঁরা সুবিধাজনক স্থানে নেমে ড্রাইভারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর জন্য ড্রাইভারকে চা খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই সময় তাঁরা সু-কৌশলে ড্রাইভারের চায়ের মধ্যে চেতনানাশক/ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। ড্রাইভার আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লে ছিনতাইকারী চক্রের পূর্বনির্ধারিত প্রশিক্ষিত ড্রাইভার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তবে এই চক্রের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কৌশলটি হলো চালককে হত্যা করা।

অটোরিকশা ভাড়া করে তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে যাওয়ার চেষ্টাকালে কখনো যদি ওই চালক ছিনতাই চক্রের কৌশল বুঝে ফেলে কিংবা কোনো সন্দেহ তৈরি হয় তখন ওই চালক তাঁদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা প্রথমে উক্ত চালককে ভয়ভীতি দেখিয়ে অটো ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে গাড়ির চালক ছিনতাই চক্রকে গাড়িটি ছিনতাইয়ে বাধা দিলে তাৎক্ষণিক তাঁকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে মৃত অথবা অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দিয়ে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যান।