মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এগুলো হলো স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এসবের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশ।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপালসহ পুলিশ বাহিনী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। তিনি পুলিশ একাডেমি চত্বরে একটি জয়তুনগাছের চারা রোপণ করেন। তিনি সহকারী পুলিশ সুপারদের সাথে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন এবং পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদ্য প্রশিক্ষণ শেষ করা শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। পরে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাররা শপথবাক্য পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণের শুরুতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা, পঁচাত্তরে ঘাতকের হাতে শহীদ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সশ্রদ্ধভরে স্মরণ করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম প্রদান করেন সদ্য প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা শিক্ষানবিশ পুলিশ সুপাররা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সাথে নিয়ে এ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছে। এ দেশে সংবিধানকে সমুন্নত করার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশবিরোধী অপশক্তি বিভিন্ন সময়ে হত্যা, লুটপাট, বোমা হামলা এবং আগুন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে। এমন ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সাথে তাদের প্রতিহত করে দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে এনেছে। আমি এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধ এবং অপরাধীর ধরনে পরিবর্তন হয়েছে। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলার মাটি থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের প্রত্যয় নিয়ে গঠিত পুলিশের বিশেষ ইউনিট এটিইউ, সিটিটিসিসহ অন্যান্য সকল ইউনিট সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কার্যক্রম দেশ ও বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। ফলে, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক, দুর্নীতি, সাইবার ক্রাইম ও অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই সার্ভিস ব্যবহার করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও সহজে ই-ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের জরুরি সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এ ছাড়া নারী নির্যা্তনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের দৃঢ় অবস্থান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পুলিশের সৃজনশীল উদ্যোগও ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব, দক্ষতা ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আমাদের দেশের সম্মানকে উজ্জ্বল করেছে।
৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাররা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশকে আধুনিকায়ন ও জনবল বৃদ্ধিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক সময়ে নাগরিক সেবার ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। মানুষ তার চরমতম বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই পেশাদারত্ব ও সহমর্মিতার সাথে আইনি সেবা দিয়ে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা করা পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের পবিত্র দায়িত্ব। তিনি বলেন, ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজের দিনে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাসংগ্রামে আপনাদের পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগকে হৃদয়ে ধারণ করে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির সমৃদ্ধিতে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এসবের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশ। এ জন্য পুলিশকে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ বাহিনীর জনবল, ভৌত অবকাঠামো, লজিস্টিকস ও যানবাহন, আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধিসহ পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের সরকার সব সময়ই আন্তরিক থাকবে।
বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন ও দেশের অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদ্য প্রশিক্ষণ শেষ করা পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনারাও আমাদের সাথি। এ জন্য আপনাদের যুগোপযোগী কর্মকৌশল গ্রহণ এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে আপনাদের প্রস্তুত হতে হবে স্মার্ট পুলিশ হিসেবে। আপনাদের প্রতিটি কাজে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটাতে হবে।