আগামী জুনে স্বপ্নের পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। এবার সেতুতে রেলিং স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই আটটি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ শতাংশ, আর মূল সেতুর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। খবর বাসসের।

সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতুর এস৭ ও এস৮ নম্বর খুঁটির মধ্যবর্তী স্থানে স্টিলের তৈরি ল্যাম্পপোস্টের মূল কাঠামো স্থাপন শুরু হয় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে । প্রথম দিন আটটি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। মাওয়া প্রান্তের দক্ষিণ পাশের সংযোগ সেতুর এস১ নম্বর থেকে এস৮ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত এই ৮টি ল্যাম্পপোস্ট বসে। ক্রেনে করে এই ল্যাম্পপোস্ট উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হয়।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুর রহমান জানান, এসব কাঠামো চীন থেকে আনা হয়েছে। প্রায় ১৫ দিন আগে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে সড়ক পথে পদ্মা সেতুর মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে ৯৫টি ল্যাম্পপোস্টের কাঠামো নিয়ে আসা হয়।

তিনি আরও জানান, সংযোগ সেতুসহ পুরো সেতুতে মোট ৪১৬টি ল্যাম্পপোস্ট বসবে। এগুলোর মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতুতে ৩২৮টি এবং দুই প্রান্তের সংযোগ সেতুতে বসবে ৮৮টি ল্যাম্পপোস্ট। সেতুর মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর যে পথ ধরে যানবাহন নামবে, সে পথে বসানো হবে ২০টি ল্যাম্পপোস্ট। আর মাওয়া প্রান্তের যে পথে যানবাহন উঠবে, সেখানে স্থাপন করা হবে ২২টি ল্যাম্পপোস্ট। অন্যদিকে, সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যানবাহন নামার পথে ২৪টি এবং ওঠার পথে ২২টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হবে।

তিনি আরও জানান, ল্যাম্পপোস্ট বসানোর জন্য ৪১৬টি লাইটিং ব্লিস্টার সেগমেন্ট ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এখন শুধু বসানো বাকি। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন ১০টি করে ল্যাম্পপোস্ট বসানো সম্ভব হলে দেড় থেকে দুই মাসে পুরো সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসে যাবে। এই ল্যাম্পপোস্ট পদ্মা সেতুকে রাতে আলোকিত রাখবে।

এদিকে রেলিং বসানো শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুজুড়েই এখন রেলিং। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু মুভমেন্ট জয়েন্টের জন্য কয়েকটি বসানো হয়নি। তাদের হিসাবে বুধবারই রেলিং-প্যারাপেট ওয়াল বসানো শেষ।

১৮০৪ মিলিমিটার দীর্ঘ ১৫০০ মিলিমিটার প্রস্থ, ১০০ মিলিমিটার পুরুত্বের সিমেন্টের তৈরি প্রতিটি প্যারাপেট ওয়ালই ক্রেনে করে বসিয়ে দেওয়া হয়।
বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার স্মারক পদ্মা সেতু চালুর অপেক্ষায় এখন। সেতুর দুই পাশের রেলিং-প্যারপেট ওয়াল সম্পন্ন। মূল সেতু, সংযোগ সেতুসহ মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত শোভা ছড়াচ্ছে প্যারাপেট ওয়াল। সেতুর ১২ হাজার ৩৯০টি প্যারাপেট ওয়ালের বসানো বাকি মাত্র ১৯২টি। সেতুজুড়েই প্যারাপেট। এদিকে মূল সেতুর মাঝখানে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডিভাইডারের মধ্যে বাকি রয়েছে মাত্র ২০০ মিটার।

আর সড়কপথে চলছে কার্পেটিং। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে পদ্মা সেতুর সড়কপথের পিচ ঢালাইয়ের কাজ। ওয়াটার প্রুভ লেয়ারের ওপর প্রথম পর্যায়ে ৬০ মিলিমিটার পুরুত্বে পিচ ঢালাই হচ্ছে। এর ওপর আর ৪০ মিলিমিটার থিকনেসের আরেকটি লেয়ার দেওয়া হবে। ব্ল্যাকটপ হবে ১০০ মিলিমিটার পুরত্বের। আর নিচতলায় রেলের পূর্ব পাশেই পুরোদমে বসছে গ্যাসলাইন। সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তাই খুশি পদ্মাপারের মানুষ। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক বলেন, আগামী ৩০ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার টার্গেট নিয়েই এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে।

সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৯ এবং মূল সেতুর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জুন সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।