পুলিশের হেফাজতে অপহরণকারী চক্রের গ্রেপ্তার দুই সদস্য। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ প্রবাসফেরত এক যুবককে অপহরণকারী চক্রের নারী সদস্যসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি অপহরণকাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার জব্দ করেছে।

জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ গোলাপগঞ্জ মডেল থানাধীন ঢাকা দক্ষিণ এলাকার সদ্য প্রবাসফেরত যুবক সোহেল আহমদকে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনা থেকে রামদা বাজার যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠলে ছদ্মবেশী প্রতারক চক্রের সদস্যরা নাকে-মুখে স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে সিলেটে নিয়ে যান। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক প্রাইভেট কার নিয়ে অবস্থান করা চক্রের নারী সদস্য সুবর্ণা আক্তার লাকির কছে হস্তান্তর করেন। এরপর লাকি তাঁর অন্যান্য সহযোগীর সহায়তায় সোহেল আহমদকে কমলগঞ্জ থানাধীন আদমপুর এলাকায় তাঁদের সহযোগী বাচ্চু ও বুলবুলের বাড়িতে নিয়ে একটি কক্ষে বন্দি করেন। এরপর সুমন রশীদ, বাচ্চু মিয়া ও বুলবুল মিলে সোহেল আহমদের হাত-পা, চোখ বেঁধে স্টিলের পাইপ ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। সেই সঙ্গে রাতের মধ্যেই ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার হুমকি দেন। তখন সোহেল আহমদ প্রাণে বাঁচতে তাঁর নিকটাত্মীয়দের সহায়তায় ৯২ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিলে রাত আড়াইটার দিকে সোহেল আহমদের চোখ-মুখ বেঁধে তাঁর কেডস, দামি ঘড়ি, মোবাইল ফোন ও বিদেশি আংটি রেখে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে অনুমান ৩ কিলোমিটার দূরে রাস্তায় ফেলে যান।

অপহরণকারী চক্রের হাত থেকে ফিরে এসে গত ৩ মার্চ সোহেল আহমদ গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় ঘটনার বিষয়টি জানালে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ অপহরণকারী চক্রের সন্ধানে নামে।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশের একটি আভিযানিক দল ৬ এপ্রিল মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে অপহরণকারী চক্রের নারী সদস্য সুবর্ণা আক্তার লাকিকে (৩২) মহানগরীর একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর সুবর্ণা আক্তার লাকির দেওয়া তথ্য মোতাবেক সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাঁর ঘনিষ্ঠ মো. জাহাঙ্গীর আলম রুবেল (২৭) ও জাহেদ আহমদকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক চক্রের অন্যতম মূল হোতা সুমন রশীদকে (৩৩) ওসমানীনগর থানাধীন তাজপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করলে তাঁর হেফাজত থেকে ভিকটিম সোহেল আহমদের কেডস, দামি ঘড়ি, মোবাইল ফোন ও বিদেশি আংটি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার সুবর্ণা আক্তার লাকি ও তাঁর সহযোগীরা আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ প্রতারক চক্রে নারী সদস্যসহ ১০/১২ জন সহযোগী কাজ করেন। বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানকালে প্রবাসফেরত যুবকদের টার্গেট করে অটোরিকশা বা প্রাইভেট কারে করে অপহরণ করে নিয়ে যান। অপহরণের পর তাঁদের আস্তানায় আটক করে ব্যাপক মারধর করেন এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে থাকেন। অপহরণকারী চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।