চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম গোয়েন্দা-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী বিপিএম-সেবা, পিপিএম। ছবি: পুলিশ নিউজ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৌশলে সখ্য গড়ে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সোহাগ আহমেদ, রিপন ইসলাম, সোহেল রানা ও লিটন আলী। তাঁদের হেফাজত থেকে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

বুধবার সকালে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান যুগ্ম কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম গোয়েন্দা-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী বিপিএম-সেবা, পিপিএম।

যুগ্ম কমিশনার বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ২৭ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের অপরাধের কৌশল সম্পর্কে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণা করে থাকে। তারা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসীদের টার্গেট করে থাকে। প্রথমে প্রতারকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে এবং প্রবাসীদের আইডিগুলোকে টার্গেট করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। প্রবাসীরা রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলে বা মেসেজে রিপ্লাই দিলে প্রতারকেরা ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে ভিকটিমদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এমনকি পুরুষ প্রতারকেরা মেসেঞ্জারে নারী কণ্ঠে কথা বলে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা করে বিশ্বাস স্থাপন করে। একপর্যায়ে প্রতারকেরা ভিডিও কলের প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমদের ইমো নম্বর নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারকেরা ভিকটিমের নম্বর দিয়ে তাদের ডিভাইসে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করে এবং ভিকটিমের কাছে যাওয়া ওটিপি নম্বর বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে নেয়। ওটিপি প্রাপ্তির পর প্রতারকেরা প্রবাসীর ইমো অ্যাকাউন্ট আয়ত্তে নিয়ে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে। পরবর্তী সময়ে ইমো-ব্যাটা ব্যবহার করে প্রবাসীর ইমো অ্যাকাউন্টের নম্বর পরিবর্তন করে। প্রতারকেরা ইমো অ্যাকাউন্টের হিস্টোরি থেকে পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের নম্বর সংগ্রহ করে এবং জরুরি কাজের কথা বলে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে। এভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে তারা ভিকটিম ও তার পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।’
যুগ্ম কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম গোয়েন্দা-উত্তর) এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে কিছু সুপারিশ করেন।
* ইমো অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন।
* সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলাপচারিতায় সাবধানতা অবলম্বন।
* যাচাই-বাছাই না করে বিকাশ কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে কাউকে টাকা-পয়সা না দেওয়া।
* ইমো বা অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে কোনো আত্মীয়স্বজনের আইডি থেকে টাকা চাওয়া হলে আগে তা যাচাই-বাছাই করে নেওয়া।
* মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের ইমো ব্যবহার ও ইমো হ্যাকের ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
* ই-ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে কাকে টাকা দিচ্ছেন, তার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া।
* ইমো বা ম্যাসেঞ্জারে অপরিচিত গ্রুপ কলে যুক্ত না হওয়া।
* কখনো অপরিচিত কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত ইমো নম্বর অথবা ওটিপি শেয়ার না করা।
*অশ্লীল ও যৌন উত্তেজক গ্রুপে নিজেকে যুক্ত না করা।