ভিকটিম রাজা।ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

পাবনার সাঁথিয়া থানায় আলোচিত রাজা হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

গত ১৭ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় ভিকটিম রাজা তাঁর পূর্ব পরিচিত মো. অনিক হোসেন (১৮) ও হৃদয় হোসেনের (১৯) সঙ্গে প্রতিবেশী জয়নালের (২৫) সিএনজিচালিত আটোরিকশা করে পিকনিকের কথা বলে কাশিনাথপুরের বরাটে যান। কিন্তু এরপর রাজা যথাসময়ে বাড়িতে না ফেরায় তাঁর স্ত্রী মোসা. রাশিদা রাজার মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে অটোরিকশাচালক জয়নাল ফোনটি রিসিভ করে বলেন যে, তাঁর কাছে রাজা মোবাইল ফোনটি রেখে কোথায় যেন চলে গেছেন। ওই দিন রাত্রিতে রাজা বাড়িতে ফিরে না এলে পরিবারের লোকজন তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ২০ জুলাই সকাল ৯টার সময় সাঁথিয়া থানাধীন সোনাকুড়া বরাট গ্রামের সরকারি ক্যানেলের কচুরিপানার মধ্যে রাজার অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়।

বিষয়টি হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা হওয়ায় রাজার স্ত্রী বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের নির্দেশনায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সিএনজিচালক জয়নাল (২৫) , মো. হৃদয় হোসেন (২০) এবং পিয়াস সরকারকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামিরা এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলে তাঁদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

পরে পুলিশের একটি চৌকস টিম ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মো. মামুন খান (২৩) ও মো. আশিক ফকিরকে (২৫) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।

আশিক

মামুন
পিয়াস
হৃদয়
মোঃ জয়নাল

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মামুন খান (২৩) আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আসামি মো. মামুন খানের (২৩) দেওয়া জবানবন্দিতে জানা যায় যে, ভিকটিম রাজা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মাদক খাওয়ার টাকাপয়সাকে কেন্দ্র করে আসামি হৃদয় এবং অনিকের সাথে ঝামেলা ছিল। অপর আসামি মামুন এবং জুয়েলের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে সাঁথিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটা মামলা হয়। এই মামলার সোর্স হিসেবে ভিকটিম রাজা ছিলেন বলে আসামিদের ধারণা। আর এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রনির সাথে খাসের পুকুর ও জমির দখল নিয়ে বিরোধ ছিল। এসব বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে রাজাকে মো. জয়নালের সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে মো. হৃদয় ও মো. অনিককে দিয়ে ডেকে নিয়ে আসার পর গাঁজা খাওয়ার কথা বলে সোনাকুড়া বরাট গ্রামের সরকারি ক্যানেলের ধারে পাটখেতে নিয়ে যান এবং আসামি মো. রনির নেতৃত্বে মো. হৃদয়, মো. জয়নাল, মো. অনিক, মো. জুয়েল, মো. মামুন, মো. আশিক, এনামুল হক ও মো. সোহেল মিলে রাজাকে গলাটিপে হত্যা করে মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী ক্যানেলে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।

আসামি মো. জয়নালের কাছ থেকে রাজার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে।