বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সংগ্রামী নারী ফাতেমাকে রিকশা উপহার দেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ছোটবেলায় লঞ্চডুবিতে বাবা মারা গেছেন। তারপর জীবন কখনো কেটেছে পথে-ঘাটে, কখনোবা মানুষের বাসায় কাজ করে। একসময় পরিচয় হয় এক গার্মেন্টকর্মীর সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ঘরও বাঁধেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। নির্যাতনে পেটের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্ব যখন টালমাটাল, ঠিক তখনই স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সে সময়ও তিনি সন্তানসম্ভবা। ওই অবস্থায়ই শুরু করেন রিকশা চালানো, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এবারও অনাগত সন্তানটি পৃথিবীর মুখ দেখতে পারেনি।

সংগ্রামী নারী ফাতেমার গল্প এটি। কিন্তু তা যেন কোনো উপন্যাসের গল্পকেও হার মানায়। ফাতেমার বয়স এখন খুব বেশি হলে ২০ বছর হবে। কিন্তু এই ২০ বছরেই তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন রূপটি যেন দেখে ফেলেছেন। তবে তিনি হার মানেননি। এই হার না মানা সংগ্রামে ফাতেমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা ৪ অক্টোবর (সোমবার) তাঁকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা উপহার দিয়েছেন।

পুনাক সভানেত্রীর কাছ থেকে রিকশা উপহার পেয়ে খুশি ফাতেমা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুনাক ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাকালে ফাতেমার স্বামী তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর নিজের ও অনাগত সন্তানের কথা ভেবে ফাতেমা রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রথমে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না তাঁকে রিকশা দিতে। অনেক চেষ্টা করে একজনের কাছ থেকে ভাড়ায় চালাতে রিকশা পান ফাতেমা। তবে সেখানে দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা জমা দিতে হতো। সন্তান পেটে নিয়েই রিকশার পেডেল চেপেছেন ফাতেমা। কিন্তু আবারও মৃত সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরপর দুবার মৃত সন্তান জন্ম হওয়ায় এবং স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় একেবারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ফাতেমা। তাঁর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তাঁর মেজ বোন নিজের মেয়েকে ফাতেমার কাছে দিয়ে দেন। এই মেয়েই এখন ফাতেমার সব। তাকে বড় করতে তিনি পথে পথে রিকশা চালান।
সংগ্রামী নারী ফাতেমাকে পরম মমতায় আদর করে দেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মির্জা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সূত্র আরও জানায়, ফাতেমার বিষয়টি জানতে পেরে পরম মমতায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। রাজধানীর রমনায় পুনাক-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৪ অক্টোবর (সোমবার) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে পুনাক-এর অন্যান্য নেতার উপস্থিতিতে ফাতেমার হাতে তিনি একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী তুলে দিয়েছেন। উপহারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ফাতেমা ও তাঁর মেয়ের জন্য পোশাক, রেইনকোট, চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ ইত্যাদি।
পুনাক সভানেত্রী জীশান মির্জা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফাতেমা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

রিকশা ও উপহারসামগ্রী পেয়ে আপ্লুত ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় পুনাক সভানেত্রী তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা বলেন, ‘জীবনে কখনো এত আদর কেউ করেনি। আজ আমি ভালোবাসা পেয়েছি, নতুন মা পেয়েছি।’

উল্লেখ্য, পুনাক-এর বর্তমান সভানেত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এভাবেই অসহায় দুস্থ মানুষের জীবনে আশার আলো ফুটিয়ে তুলতে অহর্নিশ কাজ করে চলেছেন।