চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক গোলটেবিল বৈঠকে এই গুরুত্ব আরোপ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘টুওয়ার্ডস আ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচার’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করে স্পেন ও ইউরোপীয় কাউন্সিল। খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একমত, বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। বর্তমান রেটিং সিস্টেম অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধাকে আরও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রায়ই আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সগুলোকে ব্যয়বহুল ও নাগালের বাইরে দেখতে পাই। ঋণের ঝামেলা এড়াতে উচ্চ সুদের ঋণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ কখনোই এর ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি। আমরা সেই রেকর্ড বজায় রাখার আশা করি।’

আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়ন বিবরণী দেখায় যে, আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জন্য আমাদের প্রত্যাশার প্রতি সায় দেওয়ার সময় এসেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের প্রকৃতি ও পরিধির বিষয়ে অ্যাগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। একটি মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন।’

এ লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এমডিবি, আইএফআই এবং বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প ব্যয়ে রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন। পছন্দসই উচ্চ মানের বিপুল পরিমাণে অনুদান ও সব ঋণদানের উপকরণগুলোয় দুর্যোগের ধারা থাকতে হবে, যাতে দুর্বল দেশগুলো সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে।

চতুর্থ দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঋণদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

পঞ্চম এবং শেষ প্রস্তাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তার সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে। মহামারির ঠিক আগে আমাদের অর্থনীতি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং জলবায়ু সংকট আমাদের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য এবং আমাদের উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১.৯ থেকে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫.৫ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।’

এ সভা আহ্বান করায় শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান।

এ সময় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।