শেরপুর সদর থানা-পুলিশ আয়োজিত বিট পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

’বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ স্লোগানে মাদক, জুয়া, ইভ টিজিং, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ এবং পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অপমৃত্যু প্রতিরোধে শেরপুর সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সচেতনতামূলক বিট পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শেরপুর সদর থানার বলাইচরের দশআনি বাজার প্রাঙ্গণে ২৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে শেরপুর সদর থানা-পুলিশ আয়োজিত বিট পুলিশিং সমাবেশ প্রধান অতিথি ছিলেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাবেশস্থলে পৌঁছালে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই স্বপ্ন রূপান্তরের পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ভিশন-২০৪১ বিনির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে এগিয়ে চলেছি আমরা। এই উন্নতিতে বাধা হয়ে আসছে বিভ্রান্তকারী কিছু দুষ্ট চক্র। আমি অনুরোধ করব, আপনারা এই দুষ্ট চক্রের ফাঁদে পা দেবেন না। এসব চক্রের মধ্যে একটি হলো সর্বনাশা মাদক। আমাদের অবশ্যই মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।
বিট পুলিশিং সমাবেশে উপস্থিত অতিথিদের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমি শেরপুর জেলায় যোগদান করে জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। মাদকের সাথে কারও কোনোভাবে সম্পৃক্ততা থাকবে না- সেটা পুলিশ সদস্য হোক, রাজনৈতিক বা অন্য যে কেউ মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হলে চরম মূল্য দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে আরেকটি সমস্যা আছে, যে সমস্যাটা কিন্তু সর্বজনীন। আমাদের মা-বোনকে সচেতন করতে হবে এ বিষয়ে। সেটা হলো বাল্যবিবাহ। আপনারা জানেন, শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষিত মায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। একটা জিনিস আমাকে খুব পীড়া দেয়, তা হলো শেরপুর জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সর্বাধিকসংখ্যক লোকের মৃত্যু হয়। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
বিট পুলিশিং সমাবেশে উপস্থিত অতিথিদের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ সুপার বলেন, এ ছাড়া বিভিন্ন সময় শেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। শিশুগুলোকে রক্ষা করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। আমি চাই না যে আর একটি শিশুও এভাবে তার পরিবারের অবহেলায় মারা যাক। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশিং সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, সেবার কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করা এবং পুলিশের সাথে প্রান্তিক জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের এই আয়োজন। এ সময় তিনি যেকোনো ধরনের অপরাধ সম্পর্কে তথ্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বা জেলা পুলিশের হটলাইন নম্বরে ফোন করে জানানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বছির আহমেদ বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. সোহেল মাহমুদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান, শেরপুর সদর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, বলাইরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ, বলাইরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম মনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

বিট পুলিশিং সমাবেশে অন্যদের মধ্যে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, সনাতন ধর্মাবলম্বী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।