শেরপুরের নবাগত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। ছবি: পুলিশ নিউজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাশিত ‘জনগণের পুলিশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবর্তিত ‘ভিশন ২০৪১’-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শেরপুর জেলা পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও বেশি জনবান্ধব, জবাবদিহিতামূলক এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে নবাগত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, বিপিএম আগামী ১০০ দিনের ৭টি প্রধান কার্যক্রমের বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

নিয়মিত পুলিশিং কার্যক্রমের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক এসব পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে শেরপুর জেলাবাসীর আধুনিক, মানসম্মত ও যথাযথ পুলিশি সেবা প্রাপ্তি আরও বেশি সহজ, সুসংহত ও সুদৃঢ় হবে।

আগামী ১০০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ সুপার ৭টি লক্ষ্যমাত্রাকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছেন।

১. মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক কার্যক্রম: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেরপুর জেলা পুলিশ মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করবে। সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থেকে মাদক সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করবে না জেলা পুলিশ। মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পাবলিক কিংবা পুলিশ—সবার জন্যই একই ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২. সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টিকারী অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান: শেরপুর জেলার কোথায়ও সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে এমন কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করবে জেলা পুলিশ। বিশেষ করে যৌনবৃত্তি, যেকোনো ধরনের জুয়া, ইভটিজিং, যৌন হয়রানির মতো অপরাধগুলোকে কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টিকারী এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা পুলিশ কয়েক স্তরের প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

৩. স্পেশাল রেসপন্স টিম (এসআরটি) গঠন: জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং প্রতিটি থানায় একটি করে এসআরটি টিম থাকবে। নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এসব টিমে জনগণের যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাড়াদান নিশ্চিত করা হবে। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা এই টিম পুলিশি সেবা প্রদানে প্রস্তুত থাকবে।

৪. ‘টক-টু-এসপি’ সেবা চালু: জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য দুটি হটলাইন চালু করা হবে। এই হটলাইন পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে একটি টিমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই হটলাইনের মাধ্যমে জনগণ প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করতে পারবেন।

৫. ‘আপনার এসপি, আপনার কাছে’ কার্যক্রম চালু: শেরপুর জেলা পুলিশ ‘আপনার এসপি, আপনার কাছে’ কার্যক্রম চালু করবে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ‘আপনার এসপি, আপনার কাছে’ কার্যক্রমটির মাধ্যমে সপ্তাহে তিন দিন তথা রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুলিশ সুপার নিজে কিংবা তাঁর নির্ধারিত কোনো প্রতিনিধি সরাসরি জনগণের কাছ থেকে বিভিন্ন পুলিশি সেবা, অভিযোগ, প্রতিকার কিংবা প্রয়োজনের কথা শুনবেন এবং তদানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যেকোনো নাগরিক এ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন।

৬. ‘পুলিশ বুলেটিন’ চালু: শেরপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রতি মাসে ‘পুলিশ বুলেটিন’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হবে। এই ম্যাগাজিনের মাধ্যমে জেলা পুলিশের সার্বিক কার্যক্রমকে জনগণের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি শেরপুর জেলাবাসীর প্রত্যাশিত পুলিশি সেবার প্রতিফলন থাকবে। এটি প্রতি মাসের ১৫ তারিখে প্রকাশ করা হবে, যা একই সঙ্গে অনলাইর এবং অফলাইন ভার্সনে পাওয়া যাবে।

৭. মামলা তদন্তে বিশেষ টিম: শেরপুর জেলা পুলিশ মামলা তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত টিম গঠন করবে। এই টিমটি জেলার বিভিন্ন থানার মামলাগুলোর নিরপেক্ষ ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নিয়োজিত থাকবে। জেলার সব মামলা এই টিমটির মাধ্যমে নিয়মিতভাবে দেখভাল করা হবে এবং তদন্ত কর্মকর্তা যাতে দ্রুততম সময়ের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবে।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ সুপার আগামী ১০০ দিনের জন্য এসব পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছেন। এসব পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য তদানুযায়ী আনুষঙ্গিক সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

প্রথম ১০০ দিন শেষ হওয়ার পর এসব লক্ষ্যমাত্রার প্রকৃত অর্জন মূল্যায়নের পাশাপাশি জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরবর্তী ১০০ দিনের জন্য বিদ্যমান কার্যক্রমের সঙ্গে আরও নতুন করে সাতটি পরিকল্পনা যুক্ত করা হবে। এভাবেই ধাপে ধাপে গতানুগতিক পুলিশিং খোলনলচে বদলে ফেলে আধুনিক ও জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে শেরপুর জেলা পুলিশ।