শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের দেশব্যাপী সাড়াজাগানো নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’-এর ১৫০তম সফল মঞ্চায়ন হয়েছে। সোমবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান (বিপিএম-বার, পিপিএম-বার)। খবর ডিএমপি নিউজের।

প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‌‘বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের আয়োজনে অভিশপ্ত আগস্ট নাটকের ১৫০তম আয়োজন মঞ্চায়ন হলো, সেটা দেখার সুযোগ পেয়েছি; তাই এই ক্লাবের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা আমার জন্য বড় সুযোগ ছিল। নাটকটি দেখে আমি অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছি। এই নাটকের শেষ দৃশ্য যখন দেখছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, আমি এই দৃশ্য দেখতে চাই না। এমন ভয়াবহ, মর্মান্তিক ও অভিশপ্ত একটি দৃশ্য।’

তিনি বলেন, ‘যার নেতৃত্বে এ বাঙালি তার জাতিরাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে, সেই বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজ বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের কাছে শোকের প্রতীক নয়, একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বাঙালির সৃজনশীলতার ও মননশীলতারও প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ কিংবা নাটক লেখা হয়েছে; পৃথিবীতে আর কোনো নেতাকে নিয়ে এমনটা দেখা যায়নি। এই বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন আমরা এই বঙ্গবন্ধুকে আমাদের হৃদয়ে সৃজনশীলতার, মননশীলতার ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে সম্মান করব।’

বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির ইতিহাসের একমাত্র প্রতীক। বঙ্গবন্ধু যেভাবে একটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আমি আর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাই না। আপনারা যাঁরা এই নাটক দেখেছেন, আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা বঙ্গবন্ধুকে প্রত্যক্ষ করেনি, অপ্রত্যক্ষ বঙ্গবন্ধুকে আজকে যেভাবে এই নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেই জীবন্ত বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসে যেমন আছে, একইভাবে যেন আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে তিনি বেঁচে থাকেন। সে জন্য বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস সবাইকে ভালোভাবে জানাতে হবে।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটককে আমি নাটক বলব না। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া জাতির পিতা এবং তাঁর পরিবারের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, যেটি বিশ্বের সমস্ত নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছিল। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সেই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষকে জানানোর জন্য আমাদের এই প্রয়াস ছিল।’

পুলিশ থিয়েটারের প্রযোজনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালরাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ওপর ইতিহাস-আশ্রয়ী ও গবেষণালব্ধ সাড়াজাগানো নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)-এর পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলনে নাটকটিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দর্শক আসনে বসা অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুর রহমান। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের সদস্যরা অভিনয় করেছেন।

২০২১ সালের ৩১ জুলাই উদ্বোধনী প্রদর্শনী হওয়া নাটকটি ইতিমধ্যে দেশের ৪৪টি জেলায় ৮৩ বার এবং ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন মঞ্চে ৬৬ বার প্রদর্শিত হয়েছে। বিটিভি নিজ স্টুডিওতে ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকটি ধারণ করে বিভিন্ন সময়ে সম্প্রচার করেছে এবং চ্যানেল আই নাটকটি মঞ্চ থেকে সরাসরি এবং বিভিন্ন সময় সম্প্রচার করেছে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বর্বরতায় সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাকডাকা ভোরে। সেই হত্যাকাণ্ডের করুণ আলেখ্য এবং পূর্বাপর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকে। বিশেষ করে ইতিহাসের খলনায়ক খন্দকার মোশতাক এবং ঘাতক চক্রের সদস্য মেজর ফারুক, মেজর রশীদসহ পর্দার আড়ালে থাকা মাস্টারপ্ল্যানারদের ষড়যন্ত্রের বীজ বুনন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও ক্ষমতা দখলের নীলনকশা তৈরি এবং সেই ষড়যন্ত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির গোপন পৃষ্ঠপোষকতা এখানে উঠে এসেছে। সেই সাথে উঠে এসেছে আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই হত্যাকাণ্ডের পূর্ব পর্যন্ত ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের কর্মব্যস্ততার চিত্র, যেটা দেখে বোঝারই উপায় ছিল না, কিছুক্ষণ পরেই বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস এই বাড়ি হয়ে উঠবে বীভৎস এক মৃত্যুপুরী।