২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনার সূচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন করেন তাঁর শিক্ষক ও জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে পাশে নিয়ে। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল, আর তিনি হারালেন একজন অভিভাবককে।

এক শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী যেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন, তা বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। নজরুল গবেষণায় ড. মো রফিকুল ইসলামের অবদান অনন্যসাধারণ। বিশিষ্ট এই গুণী লেখক ও গবেষকের সাহিত্যকর্ম বাঙালি জাতিকে সব সময়ই মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি মনেপ্রাণে জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ ও লালন করতেন এবং মুজিববর্ষের নানা আয়োজন সফল করতে দক্ষতার সাথে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বাংলা সাহিত্য ও গবেষণায় তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।’ খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় মারা যান নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষক, গবেষকের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক ছিলেন রফিকুল ইসলাম। গত শতকের ষাটের দশকে তাঁকে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে আমি আমার শিক্ষক, গুরুজন ও অভিভাবককে হারালাম। বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার প্রিয় শিক্ষকের উৎসাহ ও প্রেরণা আমাকে সাহস জুগিয়েছে এবং এগিয়ে যেতে শক্তি দিয়েছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার বড় পরিসরে উদযাপনের আয়োজন করলে তা বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি করা হয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার সাক্ষী রফিকুল ইসলামকেই সেই কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আনেন তাঁর ছাত্রী শেখ হাসিনা।

গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী, এ বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সব আয়োজনে ‘গুরুজন ও অভিভাবক’ রফিকুল ইসলামকে পাশে রেখেছিলেন তিনি।

মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকার অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে’ ভূষিত করে।

মহামারির কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজের শিক্ষকের হাতে সরাসরি পদক তুলে দিতে না পারার কষ্টের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‌’স্যার, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।’

শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রিয় শিক্ষকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।