তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত চারজনকে পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো

খেলনা বিক্রি শেষে বাড়ি ফিরছিল মো. জসিম আলী (১৩) ও মারুফ হোসেন (১২) নামের দুই শিশু । রাজশাহী নগরের সিটিহাট এলাকায় তাদের পথ রোধ করে চার মোটরসাইকেলে থাকা আট তরুণ। কৌশলে দুই শিশুকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে অপহরণ করেন। পরে জসিমের মহাজন মনিরুল ইসলামকে (৪০) ফোন দিয়ে অপহরণকারী ব্যক্তিরা মুক্তিপণ দাবি করেন। মনিরুল এ বিষয়ে শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ জানালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পুলিশের অভিযানে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। খবর প্রথম আলোর।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী নগরের খিরশিন টিকর এলাকার মো. রাজু ইসলাম (২৬), একই এলাকার মো. সজিবুল ইসলাম (২৬), মো. মোখলেসুর রহমান (২৬) ও মো. শাকিল (২৩)।

অপহরণের শিকার জসিম আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে ও মারুফ হোসেন রাজশাহীর তানোরের মাসুদ রানার ছেলে। ব্যবসায়ী মনিরুলের কাছ থেকে খেলনা কিনে জসিম রাজশাহী নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করত।

পুলিশ জানিয়েছে, জসিম কয়েক বছর ধরে শিশুদের খেলনা ও কসমেটিকস বিক্রি করে। গত বুধবার সে নগরের খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় একটি ওরস অনুষ্ঠানের সামনে খেলনা বিক্রি করতে যায়। জসিমকে সহযোগিতা করতে সেখানে যায় বন্ধু মারুফ। গতকাল দুপুরে খড়খড়ি বাইপাস এলাকা থেকে ফেরার সময় নগরের সিটিহাট এলাকায় কয়েকজন তরুণ জসিম ও মারুফকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নেন। পরে অপহরণকারী ব্যক্তিরা মনিরুলকে কল দিয়ে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

এমন ফোন পেয়ে মনিরুল তৎক্ষণাৎ বিষয়টি শাহ মখদুম থানার পুলিশকে জানান। অপহরণকারী ব্যক্তিরা কখনো মনিরুলকে খড়খড়ি বাইপাস, কখনো পবা উপজেলার রামচন্দ্রপুর আবার কখনো সিটিহাট এলাকায় মুক্তিপণের টাকা নিয়ে যেতে বলেন। অপহরণকারী ব্যক্তিরা বারবার মুঠোফোন বন্ধ করে দিচ্ছিল। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান শুরু করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চারজনকে পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জসিম জানায়, তার বাবা একজন কৃষক। তারা দুই ভাই-বোন। পরিবারের অবস্থা ভালো না হওয়ায় সে খেলনা বিক্রি করে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সে পড়াশোনাও করেনি। জসিমের দাবি, যাঁরা তাদের অপহরণ করেছিলেন, তাঁরা কয়েক দিন ধরে তাদের অনুসরণ করছিলেন। নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। পরে গতকাল দুপুরে ভয় দেখিয়ে তাদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হয়। এরপর তাদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মারুফ জানায়, সে তানোরে একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। জসিমের সঙ্গে তার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। খড়খড়ি বাইপাস এলাকার ওরশ অনুষ্ঠানে খেলনা বেচাকেনায় সাহায্য করার জন্য জসিম তাকে আসতে বলেছিল। জসিমের কথামতো সে এসেছিল।

শাহ মখদুম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে অভিযান চালিয়ে চার অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। অপহরণের শিকার দুই শিশুর অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়েছে।