রংপুরে প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথের ভোল্ট থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা লুট করেছেন এক কর্মকর্তা। করোনা ও নিজের বদলি আদেশকে কাজে লাগিয়ে পাসওয়ার্ডধারী কর্মকর্তা আবু রায়হান এমন অপরাধ করেছেন বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে এসেছে। ২০ নভেম্বর রাতে রংপুর নগরীর ডিসির মোড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের ৬ অক্টোবর প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পীযূষ কুমার রায় লিখিতভাবে জানান, রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকার কোতোয়ালি থানাধীন প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশে রংপুর ভবনের নিচতলায় অবস্থিত তাঁদের ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অজ্ঞাত হ্যাকার/চোর ই-ট্রানজেকশন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে চুরি করেছে। ফলে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটির তদন্তভার রংপুর পিবিআই গ্রহণ করে এবং তদন্তভার এসআই ওয়াহেদুজ্জামানের ওপর অর্পণ করা হয়।

পিবিআইয়ের রংপুর জেলা পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের বরাতে জানান, কোনো আঘাত কিংবা কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ভোল্টের লোহার পার্ট থেকে দুটি ক্যাসেট সরানো হয়েছে। এটিএমটিতে কোনো প্রকার আঘাত কিংবা কোনো ক্ষতের এমনকি বাইরে থেকে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই ভল্ট থেকে টাকার ক্যাসেট সরানো হয়েছে। তাই এটি শুধু পাসওয়ার্ড ও সেফডোর কি (চাবি) অপব্যবহারের ফলে সংঘটিত হয়েছে।

জাকির হোসেন জানান, তদন্তে জানা যায়, এটিএম বুথে টাকা লোড দেওয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত দুজন পাসওয়ার্ডধারী অফিসার উপস্থিত থাকেন। একজন কাস্টমার সার্ভিস অফিসার মো. মোস্তাফিজ এবং অপরজন অফিসার আবু রায়হান। প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের রংপুর শাখা কর্তৃক তাঁরাই নির্ধারিত গোপন পাসওয়ার্ডধারী অফিসার এবং তাঁরাই দীর্ঘদিন ধরে ভল্টের টাকা লোড দিয়ে আসছেন।

তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায়, আবু রায়হান বগুড়ায় বদলি হওয়ার পরেও তিনি গত বছরের ২০ আগস্ট তারিখ পর্যন্ত প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখায় কর্মরত ছিলেন। ওই এটিএম বুথ গত বছরের ১৭ জুন বিকল হওয়ার আগ পর্যন্ত মোট ৩ বার ভোল্টে টাকা লোড দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম দিন টাকা লোড দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন পাসওয়ার্ড বহনকারী অফিসার মো. ফরহাদ ও আবু রায়হান। দ্বিতীয়বার উপস্থিত ছিলেন আবু রায়হান ও ব্যাংকের ফ্যাসিলিটিজ স্টাফ মিলন মিয়া। তিনি এটিএম বুথে উপস্থিত হয়ে মিলন মিয়ার মোবাইল ফোন থেকে সিনিয়র অফিসার ফরহাদের সঙ্গে কথা বলে ফরহাদের কাছে রক্ষিত পাসওয়ার্ডটি নেন এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ভোল্টের ডোর খুলে টাকা লোড দেন। সর্বশেষ তৃতীয়বার ওই বছরের ৩ জুন ভোল্টে টাকা লোড করার আগে অফিসার আবু রায়হান ব্যাংকের অভ্যন্তরে সিনিয়র অফিসার ফরহাদের কাছ থেকে চিরকুটে পাসওয়ার্ড লিখে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা বুথে নিয়ে যান এবং ভোল্টে লোড দেন।

পুলিশ সুপার জানান, গোপন দুটি পাসওয়ার্ডই ওই ব্যাংকের একমাত্র অফিসার আবু রায়হান জানতেন। করোনা এবং নিজ বদলি আদেশের সুযোগ নিয়ে তিনি তাঁর কাছে থাকা দুটি গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কৌশলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এটিএম বুথের ভোল্টে থাকা মোট ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় জড়িত আরও ব্যক্তি ও টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।