ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউল আহসান তালুকদার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগে থার্ড জেন্ডার মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশ। খবর ডিএমপি নিউজের।

গ্রেপ্তার আসামি হলেন শোয়েব আক্তার ওরফে লাদেন। এ সময় তাঁর হেফাজত থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ১টি হাতুড়ি ও ভিকটিমের ২টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

গত সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় শেরপুর নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বুধবার (৩১ আগস্ট ) বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউল আহসান তালুকদার।

তিনি জানান, ২৭ আগস্ট বিকেল ৫টায় স্থানীয় লোকজন টহল পুলিশকে জানায়, যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের একটি বাসায় একজন লোকের গলিত লাশ আছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে টহল পুলিশ ও ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম মাকসুদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে তাঁর পরিবারসহ সকলের কাছে বিষয়টি অপমৃত্যু বলে মনে হয়। বাড়ির মূল ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।

ঘটনাটির তদন্তে ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে মাঠে নামেন যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসেন ও এসআই মুকিত হাসান।

 তিনি আরও বলেন, তদন্তে জানা যায়, ভিকটিম মাকসুদ রহমান খান একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং উচ্চ শিক্ষিত। তিনি তাঁর নিজ বাসায় একাই বসবাস করতেন। বাসার ভেতর তিনি ৪টি কুকুর পালন করতেন। তিনি সমাজের তেমন কারও সাথে মিশতেন না। কিছু তরুণ তাঁর বাসায় যাওয়া-আসা করতেন বলে জানা যায়। পরে ভিকটিমের রুম থেকে প্রাপ্ত আলামত ও লাইফস্টাইল স্টাডি করে পুলিশ ধারণা করে, ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড, যা ১০-১২ দিন আগে সংঘটিত হয়েছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ভিকটিমের জীবনধারণের চিত্র, ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত একজনকে সন্দেহ করে। পরে সন্দেহ করা ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে শোয়েবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, ঘটনার লোমহর্ষ বর্ণনায় গ্রেপ্তার শোয়েব স্বীকার করেন, ভিকটিম মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না সমকামী ছিলেন। তাঁর সাথে ভিকটিমের দুই বছর ধরে শারীরিক সম্পর্ক ছিল। ভিকটিমের বাসায় মাঝেমধ্যে তিনি ফুট ফরমাশ খাটতেন। এর বিনিময়ে টাকাপয়সা পেতেন। দুই বছর আগে তাঁর সাথে সখ্য সৃষ্টি হয় এবং উভয়েই সমকামিতায় লিপ্ত হন।

এই হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার শোয়েব বিয়ে করেন। বিয়ের পরও তাঁদের মধ্যে সমকামিতা চলতে থাকে। কিন্তু শোয়েবের এই বিয়ে ও নতুন জীবনকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ভিকটিম। ভিকটিম শোয়েবের বিবাহিত জীবনকে ধ্বংস করতে সুযোগ খুঁজছিলেন। অন্যদিকে শোয়েবও চাইতেন এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে মুক্ত জীবনে ফিরতে। এরই অংশ হিসেবে ১৬ আগস্ট ভিকটিম মাকসুদ শোয়েবকে তাঁর গোলাপবাগের বাসায় ডেকে আনেন এবং অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম মাকসুদ শোয়েবের গোপনাঙ্গ কামড়ে ধরেন। এ সময় শোয়েব তাঁকে বাসার টেবিলে থাকা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এর ফলে ভিকটিম রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। এ সময় শোয়েব দ্রুত ওই স্থান থেকে বের হয়ে বন্ধ মূল ফটক টপকে পালিয়ে যান।

শোয়েব ঘটনার সবকিছু স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার শোয়েব বর্তমানে জেলহাজতে আছেন বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জিয়াউল আহসান তালুকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডেমরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের এস এম জাহাঙ্গীর হাছান বিপিএম (বার), পিপিএম এর নির্দেশনায় ও ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়।