পুলিশের হেফাজতে প্রতারক চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যরা: ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

রাজশাহী মহানগরীতে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ আদায় চক্রের ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। এদের মধ্যে চারজন নারী রয়েছেন।

তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. মাহিউদ্দিন মাহির (৩১), বিন সাদ মিনহাজ (২৩), মো. ছানা মিয়া (৩৫), মো. লিটন (৪৩), মো. মেহেদী হাসান (২৩), মো. হাসান ইমাম প্রিন্স (৩৩), মো. বেলায়েত হোসেন (২৮), মো. মারুফ আহমেদ (২৭), সাব্বির হোসেন লিয়ন (২৬), শিহাবুল ইসলাম নিশু (২২), ফায়েজুল ইসলাম (২৪), মো. সোহান খান (২১), আব্দুল ওয়াদুদ (২৫), ইতি আক্তার (২০), স্মৃতি শাহ সৌমিক (২১), আয়েশা (২১), রুবাইয়া(২০)।

জানা যায়, গত ২৯ মার্চ দুপুর ২টায় রাজশাহী মহানগরীর মো. আবুল এহসান ফেসবুকে ‘Rapid Cash’ নামে একটি অ্যাপসে ৩০ হাজার টাকা ঋণ লোনের বিজ্ঞাপন দেখেন। তিনি অ্যাপসটি ডাউনলোড করে তার মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বর ও লাইভ ছবি দিয়ে রেজিট্রেশন করেন। ওই দিন রাত সাড়ে ১০ টায় একটি নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর থেকে তার মোবাইল ব্যাংকিং-এ ৭১৫ টাকা ক্যাশ ইন হয়। তিনি ওই নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পান। রাত ১২টায় ‘Rapid Cash’ অ্যাপস চেক করে দেখেন তার নামে ৭১৫ টাকা জমা হয়েছে। শর্তে বলা হয়েছে, ৫৮৫ টাকা সুদ-সহ মোট ১৩০০ টাকা ৩ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এহসান তাদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পেলে ই-মেইলের মাধ্যমে সে টাকা পরিশোধ করবে মর্মে একটি মেইল পাঠান। তখন প্রতারকরা একটি নম্বর দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বলে। এরপর তিনি ১৩০০ টাকা পরিশোধ করেন।

ওই দিন আবার আবুল এহসানের নগদ অ্যাকাউন্টে আগের মতো টাকা জমা হয় এবং সুদসহ পরিশোধ করতে বলে। এরপর প্রতারক চক্ররা মোবাইল ফোনে জানান, তারা তার মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট, ছবি, ভিডিও-সহ যাবতীয় তথ্য হ্যাক করেছেন। টাকা পরিশোধ না করলে তার নগ্ন ছবি তৈরি করে সব কন্টাক্ট নম্বরসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবেন বলে হুমকি দেন।

পরবর্তীতে প্রতারকরা বিভিন্ন সময়ে একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে ‘Rapid Cash’-এর পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে টাকা চাইতে থাকেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রতারকরা তার নগ্ন ছবি তৈরি করে তাকেসহ তার কন্টাক্ট লিস্টে কয়েকজনের কাছে পাঠান এবং তার কাছের নারী আত্মীয়দের নগ্ন ছবি তৈরি করে ফেসবুকে দিবেন বলে হুমকি দেন।

আবুল এহসান ভয়ে প্রতারকদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রতারক চক্ররা তারপরেও বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছে টাকা দাবি করতে থাকেন। তিনি আবারও তাদের টাকা দেন। এভাবে আসামিরা টাকার জন্য তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন।

গত ১৪ মে আবুল এহসানের এমন অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।

মামলা হওয়ার পর উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) মো. সাইফউদ্দীন শাহীনের তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মো. সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে একটি টিম প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামেন।

১৬ মে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ওই টিম অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৪ নারীসহ প্রতারক চক্রের ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার হয়।

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ‘Rapid Cash’ মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করে আসছিল।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।