পুলিশি হেফাজতে দুই আসামি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পাঁচ চিকিৎসকসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ৯টি মোবাইল ফোন,দুটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।

গত সোমবার (১১ নভেম্বর) থেকে বুধবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত দিনাজপুর, নীলফামারী ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিরা হলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজ, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, মো. রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, ডা. মো. সোহানুর রহমান সোহান, ডা. তৌফকিুল হাসান রকি, ডা. ফয়সাল আলম বাদশা ও ডা. ইবরার আলম।

সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর কাছে থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান মেলে। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযান চালিয়ে ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম জানা গেছে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ২০১০ সাল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তিনি চক্রের হোতা জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

আরেক আসামি আবদুল হাফিজ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এ ছাড়া তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। অনৈতিক উপায়ে নিজের কোচিং সেন্টারের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার ডা. সোহানুর রহমান সোহান বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজের কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্নপত্র পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। আসামি ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

চক্রের আরেক সদস্য ডা. জিল্লুর হাসান রনির সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামি ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি বিটস কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। কোচিং সেন্টারের মালিক হাফিজ ও রকি মিলে শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা গ্রেপ্তার আসামি ডা. ইবরার আলমও রনির সহযোগী ছিলেন। ইবরার ২০১৩ ও ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে রনির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করেছিলেন।

গ্রেপ্তার আসামি রায়হানুল ইসলাম সোহান ও বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা ২০১৫ সালে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র চার শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করেন। অপর আসামি ডা. সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন।

সিআইডি জানায়, রাজধানীর মিরপুর থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।