মৃত্যুর দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস পর সৌদি আরব থেকে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং ব্র‍্যাকের সহযোগিতায় দেশে ফিরেছে মো. হানিফ নামের একজন প্রবাসীর মৃতদেহ। রোববার সন্ধ্যায় তাঁর লাশ দেশে ফেরে। গতকাল সোমবার সকালে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এয়ারপোর্ট এপিবিএন।

এয়ারপোর্ট এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, রোববার বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ বিমানের (BG340) যোগে দেশে ফিরেছে রিক্রুটিং এজেন্সি অপশন ম্যানপাওয়ার ওভারসিজ (আরএল ১৩৮৪) এর মাধ্যমে সৌদি গিয়ে নির্যাতনে মারা যাওয়া হানিফের মরদেহ। ব্র্যাক ও এপিবিএন এর যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মৃত্যুর দীর্ঘ ৫ মাস পর তাঁর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

হানিফ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মোতালেবের ছেলে। গতকাল সকালে বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণ করে তাঁর পরিবার।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক আরও জানান, ‘রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি গিয়ে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, লাশ দেশে আনার আকুতি’ শিরোনামে চলতি বছরের ৩ জুলাই খবর প্রচারিত হলে বিষয়টি বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) নজরে আসে। খবরের সূত্র ধরে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন ব্র্যাক ও এপিবিএন এবং হানিফের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করে পরিবারকে। জীবিকার সন্ধানে রিক্রুটিং এজেন্সি অপশন ম্যানপাওয়ার ওভারসিজের মাধ্যমে সৌদি আরবের আভা শহরে গিয়ে প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে হানিফের (৩৪) মৃত্যু হয়। গত ১৬ জুন রিয়াদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সেখানে বসবাসকারী নিকটাত্মীয়রা লাশ দেশে আনার বিষয়ে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।
মৃত হানিফের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা হানিফ অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকে নির্মাণশ্রমিকের (রাজমিস্ত্রি) কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। চলতি বছরের ১২ মার্চ সৌদি আরবে যান।
দেশটিতে যাওয়ার পর তাঁকে রাজমিস্ত্রির কাজ না দিয়ে আভা শহরে ভেড়া চরানোর চাকরি দেওয়া হয়। যে মালিকের অধীন তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, ওই ব্যক্তি তাঁকে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন করতেন। বিষয়টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জানানোর পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সেখানে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৬ জুন রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই দিন স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় হানিফ মারা যান। এয়ারপোর্ট এপিবিএন এ বিষয়ে সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে বারবার যোগাযোগ করলে গতকাল অবশেষে তাঁর মৃতদেহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরত আসে।
হানিফের স্ত্রী আফিয়া খাতুন এবং তাঁর ভাই বিমানবন্দরে তাঁর লাশ গ্রহণ করেন। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।