পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত আসামি বুলবুল মিয়া (মাঝে)

রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে ভ্যানচালক মিয়াজান হত্যা মামলার মূল আসামি বুলবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

জানা গেছে, মিঠাপুকুরের বাসিন্দা ভ্যানচালক মিয়াজান মিয়া (৪২) গত ২০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁর ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বের হন। এরপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন সারা রাত ধরে তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন ২১ জানুয়ারি ভোর ৭টায় মিঠাপুকুর থানার ৮ নং চ্যাংমারী ইউনিয়নের রামপশ্বরপুর গ্রামের মৃত কেরামত আলী মাস্টারের ছেলে ইমাম আলীর আমবাগান থেকে গাছের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা মিয়াজানের লাশ উদ্ধার করা হয়।হত্যাকারীরা তাঁর ভ্যান ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মিয়াজান মিয়ার বউ রোমানা বেগম ওরফে লালমাই (৩৬) ওই দিনই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মিঠাপুকুর থানা-পুলিশ দেরি না করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং ভিকটিমের লুট করে নিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন এবং ভ্যান উদ্ধারে অভিযানে নেমে পড়ে। রংপুর জেলার পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীর দক্ষ দিক-নির্দেশনায়, সার্কেল এএসপি মো. কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা, (মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ) ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. জাকির হোসেন, মিঠাপুকুরের সরাসরি তদারকিতে এবং মিঠাপুকুর থানার এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এনামুল হকের সার্বিক প্রচেষ্টা ও অন্যান্য অফিসার এবং ফোর্সদের বিভিন্ন সহযোগিতায় ২ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দু্জন অপ্রাপ্তবয়স্ক মো. মনিরুজ্জামান ওরফে মনির (১৭), মো. মেহেদি হাসান ওরফে সানিকে (১৬) আইনের হেফাজতে নেওয়া হয়।
তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভিকটিম মিয়াজানের ভ্যান, মোবাইল ফোন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার উদ্ধার করা হয়।

এদিকে মনির ও সানি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু হত্যাকান্ড ও ভ্যান ছিনতাইয়ের মূল নায়ক বুলবুল মিয়া ছিল তখনো অধরা। তবে মিঠাপুকুর থানা-পুলিশ হাল ছেড়ে দেয়নি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মিঠাপুকুর থানার ৮ নং চেংমারী ইউনিয়নের আবিরেরপাড়া মৌজায় আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির সামনের পাকা রাস্তা থেকে বুলবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর হলেও রাতের বেলা ভ্যান ছিনতাইসহ চুরির বদ-অভ্যাস ছিল তাঁর। এরপর আসামি বুলবুল স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি থেকে জানা যায়, বুলবুল এই হত্যা মামলায় আইনের হেফাজতে নেওয়া শিশু মনির ও সানির সঙ্গে একটি পরিকল্পনা করেন যে, তাঁরা যাত্রীর বেশে একটি ভ্যান ভাড়া করে তাতে উঠবেন এবং এরপর নির্জন জায়গায় গিয়ে চালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভ্যান কেড়ে নিয়ে যাবেন। এরপর বুলবুল ভ্যান বিক্রি করবেন এবং এর বিনিময়ে মনির ও সানিকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেবেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল, সানি ও মনির ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১০টায় মোসলেম বাজারে আসেন কিন্তু সব ভ্যানচালক তাঁদের পরিচিত হওয়ায় তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছিল না। তবু তাঁরা তাঁদের শিকারের সন্ধানে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় ভিকটিম মিয়াজান মিয়া তাঁর ভ্যান নিয়ে মোসলেম বাজারে এলে মেহেদি, বুলবুল এবং মনির যাত্রীবেশে তাঁর ভ্যানে উঠে পড়েন এবং পাগলারহাটের দিকে আসতে থাকেন । এরপর পাগলার হাট আসার আগেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল তাঁর মাফলার মিয়াজানের গলায় পেঁচিয়ে ধরেন এবং মিয়াজানসহ ভ্যানটি নিয়ে মূল রাস্তা থেকে ৩০০ মিটার দূরে আমবাগানে নিয়ে যান। এরপর গলায় মাফলার পেচিয়ে তিনজন মিলে মিয়াজানকে হত্যা করেন। এরপর তাঁরা মিয়াজানের হাত-পা তাঁর ভ্যানে থাকা দড়ি দিয়ে আমগাছের সাথে বাঁধেন। এরপর তাঁরা ভ্যানটি নিয়ে রাতেই রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘন্টা এলাকায় চলে যায়। পরের দিন তাঁরা ভানটি বিক্রি করে নিজ বাসায় ফেরত আসেন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন। তাঁরা ২২ জানুয়ারি মিয়াজানের জানাজাতেও অংশগ্রহণ করেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মিয়াজান হত্যা মামলার ক্লু উদঘাটন এবং মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী বুলবুল এবং তাঁর সহযোগীরা গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁর পরিবারসহ এলাকাবাসী খুবই খুশি হয়েছেন। আদালত বুলবুলকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।