ঝিনাইদহ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের অভিযানে গ্রেপ্তার কথিত জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের চার সদস্য। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

নিজেদের তারা জিনের বাদশা পরিচয় দিত। বিভিন্ন সময়ে সোনাদানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে চক্রটি। এরই একপর্যায়ে ঝিনাইদহের এক নারীর কাছ থেকে চার ভরি সোনার গয়নাও হাতিয়ে নেয় তারা। পরে ওই নারী অভিযোগ করলে ঝিনাইদহ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল মামলার দুদিনের মধ্যে অভিযান চালিয়ে জিনের বাদশা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন মো. রায়হান (২৫), তাঁর ভাই মো. তুহিন (২৩), মো. জিয়াউর (২২) ও মিলন দাস (৩৫)।

জেলা পুলিশ জানায়, ঝিনাইদহ সদর থানার মাঝপাড়া এলাকার মোছা. রেনুকা খাতুনকে (৩৫) গত ৩ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে জিনের বাদশা দাবি করেন। তিনি রেনুকাকে সাত কলস ভর্তি সোনাদানা উপহার দেওয়ার প্রলোভন দেখান। তবে এ জন্য ওই ব্যক্তি ৫৬০ টাকা দামের একটি জায়নামাজ হাদিয়া দাবি করে। ওই ব্যক্তি একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে ওই টাকা পাঠাতে বলেন। রেনুকাও সে কথা বিশ্বাস করে পরদিন সকালে টাকা পাঠিয়ে দেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম পিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

এরপর কথিত ওই জিনের বাদশা ফোন করে হুঁশিয়ারি দেয়, সোনাদানা ভর্তি কলস আর হাদিয়ার কথা কাউকে জানালে রেনুকার দুই সন্তান রক্তবমি করে মারা যাবে। এরপর সে দাবি করে, স্থানীয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিপরীতের গাছটির নিচে রেনুকাকে চার ভরি সোনার গয়না রাখতে হবে। আর সেখানে জিনের বাদশার রাখা কাপড়ে মোড়ানো একটি সোনার মূর্তি নিয়ে আসতে হবে। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, যে চার ভরি সোনার গয়না রেনুকা রেখে আসবেন, তা জিনের বাদশার দেওয়া সাত কলস সোনাদানার ভেতরেই থাকবে।

কথিত জিনের বাদশার এমন কথায় রেনুকা গত ৬ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে নির্ধারিত জায়গায় চার ভরি সোনার গয়না রেখে কাপড়ে মোড়ানো ওই সোনার মূর্তি নিয়ে আসেন। এরপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রেনুকাকে ফোন করে আজমীর শরীফের মিলাদ দেওয়া, এতিমখানায় টাকা দান, স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের লোকজনকে ক্ষতির ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে নগদ ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বরের মাধ্যমে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে সন্দেহ হলে রেনুকা বিষয়টি পরিবারের লোকজনকে জানায়। এরপর সেই কথিত সোনার মূর্তি পরখ করে দেখা যায়, সেটি আসলে পিতলের মূর্তি। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রেনুকা।

মামলার পর তদন্ত শুরু করে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল। দুদিনের মধ্যে এই সেল রেনুকার মামলায় উল্লেখিত বিকাশ ও রকেট অ্যাকাউন্ট নম্বরের সূত্র ধরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার দুর্গম এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ওই প্রতারক চক্রের সদস্য রায়হান, তুহিন, জিয়াউর ও মিলনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একাধিক মুঠোফোন ও একটি ছুরি জব্দ করে।