মানিকগঞ্জ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে রাত ১২টা ১ মিনিটে মশাল জ্বালিয়ে মানিকগঞ্জ মুক্ত দিবস পালনের কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ গোলাম আজাদ খান পিপিএম (বার)। ছবি: দৈনিক বাংলা

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মানিকগঞ্জ জেলা। একাত্তরের এদিনে পাক বাহিনী মানিকগঞ্জের মাটি ছেড়ে ঢাকার অভিমুখে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে ১৪ ডিসেম্বর সরকারী দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ওড়ানো হয় লাল-সবুজের পতাকা। যথাযোগ্য মর্যা দায় দিবসটি পালন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এ বছরও রাত ১২টা ১ মিনিটে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ গোলাম আজাদ খান পিপিএম (বার) মানিকগঞ্জ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকের সামনে মশাল জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা এবং মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকার পরিস্থিতির খবর পাওয়ার পরপরই মানিকগঞ্জের তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃতে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন করা হয়। ২৫ মার্চের রাতেই মানিকগঞ্জের ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে ছাত্র ও যুবকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। পরদিন থেকে ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর আলুর গুদামের পেছনে শুরু হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে হেলিকপ্টারে করে বিপুল সংখ্যক পাক সেনা মানিকগঞ্জ শহরে ঢোকে। প্রথমে প্রতিহতের কথা চিন্তা করলেও কৌশলগত কারণে পিছিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিপ্লবী পরিষদ।

মানিকগঞ্জ ছেড়ে কর্মীসহ বিপ্লবী পরিষদের নেতারা অবস্থান নেন হরিরামপুর উপজেলার দূর্গম অঞ্চলে। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা করার শক্তি অর্জন করেন। এরপর মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাক বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে গোলাইডাঙ্গা, সুতালড়ি, আজিমনগর, বায়রা, নিরালী সাটুরিয়া, নারচি, বালিরটেক, গাজিন্দা, মানোরার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধে পাক বাহিনীর ৮১ জন নিহত হয়। পরদিন পাক বাহিনী হেলিকপ্টারে আরও সেনা বৃদ্ধি করে গোলাইডাঙ্গা গ্রামে হামলা চালিয়ে কয়েক শ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। গুলি করে হত্যা করে আটজন নিরীহ গ্রামবাসীকে।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে পাক সেনারা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় পাক বাহিনী মানিকগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।