জব্দকৃত অক্সি-মরফোন ট্যাবলেট। ছবি: পুলিশ নিউজ

ব্যথানাশক হিসেবে ক্যানসার, হার্ট, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের জন্য ব্যবহার করা হয় মরফিন ট্যাবলেট। খোলাবাজারে ওষুধটি বিক্রি নিষিদ্ধ। তবে বর্তমানে মাদক হিসেবে এই ব্যথানাশক ট্যাবলেটের ব্যবহার হচ্ছে ব্যাপক আকারে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর ব্যাপক ব্যবহার গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অক্সি-মরফোন ট্যাবলেটসহ (মরফিন ট্যাবলেট) দুই ওষুধ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিম আসামিদের গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন আলমগীর সরকার ও জাহিদুল ইসলাম। ওষুধ ব্যবসার আড়ালে নিষিদ্ধ মরফিন ট্যাবলেট মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন আসামিরা।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বাজারে ২০ পিস অক্সি-মরফোনের দাম ৪০০ টাকা। তবে খোলাবাজারে অবৈধভাবে এই অক্সি-মরফোন ট্যাবলেটের ২০ পিস দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করত চক্রটি।

মরফিন কী

২০১৮-এর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মরফিন। ওষুধ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল এই ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি করে। বছরে একটি প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ মরফিন বিক্রি করতে পারবে, সেটিও নির্ধারণ করা থাকে।

মরফিনের একটি অ্যানালগ ভার্সন হলো অক্সি-মরফোন। এটি এনালজেসিক ড্রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইনজেকশন থেকে ওরাল ফর্মে নিয়ে আসা এই ওষুধ মূলত মস্তিষ্কে কাজ করে। তীব্র ব্যথানাশক হিসেবে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ইউফোরিক এই ড্রাগ মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। শরীরে সাময়িকভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। ব্যথার সিগন্যাল গিয়ে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। মস্তিষ্ক বোধহীন অসার হয়ে যায়। মূলত মাদকসেবীরা অক্সি-মরফোন গুঁড়া করে যেকোনো সিরাপ, পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খায়। ক্রমাগতভাবে অক্সি-মরফোন ব্যবহারে এটির প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। ব্যবহারকারীরা এটি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। ছবি: পুলিশ নিউজ

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, দেশে অক্সি-মরফোন আমদানি ও বিক্রির জন্য একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জিসকা ফার্মা। সারা দেশে ১২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অক্সি-মরফোন সরবরাহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৫ মাসে ৫ লাখ ডোজ অক্সি-মরফোন বিক্রি করেছে তারা। এটি শুধু রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী অনুমোদিত পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে।

পুলিশের ভাষ্য

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ জানান, শুক্রবার বিকেলে দুই হাজার পিস অক্সি-মরফোনসহ আলমগীর ও জাহিদুলকে বাবুবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, বরিশাল থেকে আরও ১১ হাজার পিস ট্যাবলেট কুরিয়ারে ঢাকায় আসছে। তাদের দেওয়া তথ্যে ধানমন্ডির একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে আরও ১১ হাজার পিস ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।

ডিবির কোতোয়ালি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।

তিনি বলেন, নির্ধারিত কোম্পানি থেকে এই ট্যাবলেটগুলো অবৈধভাবে আসামিদের কাছে এসেছে। এই ১৩ হাজার ট্যাবলেটের বড় একটা অংশ কুরিয়ারের মাধ্যমে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছে। যিনি এই ট্যাবলেটগুলো পাঠিয়েছেন, তিনি আগের মামলায় পলাতক আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রচণ্ড পরিমাণে ভয়ংকর ড্রাগ হওয়ায় কোম্পানিগুলো তাদের প্রচলিত মার্কেটিং চ্যানেল ব্যবহার করে। এর বিপণন নিষিদ্ধ রয়েছে। এরপরও এত বিপুলসংখ্যক ড্রাগ আসামিদের কাছে কীভাবে এলো, সেটি তদন্তাধীন রয়েছে।