শেরপুরের নকলায় বিট পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শেরপুরের এসপি মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। ছবি: ‍পুলিশ নিউজ

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে শেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান বিপিএম বলেছেন, মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।

‘বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শেরপুরের নকলায় ইভটিজিং, মাদক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অপমৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বিট পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেরপুরের নকলায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এসপি মো. কামরুজ্জামান বিপিএমকে। ছবি: পুলিশ নিউজ

নকলা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কায়দা পাগলী মার্কেট এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে শেরপুরের এসপি বলেন, ‘আমি যোগদান করে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে জনগণকে বাঁচাতে মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। মাদকের সঙ্গে কারও কোনোভাবে সম্পৃক্ততা থাকবে না। সেটা পুলিশ সদস্য হোক, রাজনীতিক কিংবা অন্য যে কেউ।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ। এতে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ মা–বোনকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশ আজ দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সামনের দিনে আমাদের একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আমরা ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাব।’

সমাবেশে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে এসপি বলেন, ‘এখানে আমার মা-বোন ও কন্যা সন্তানতুল্য তোমরা অনেকে আছো। শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষিত মায়ের ভূমিকা কিন্তু অপরিহার্য। তাই সমাজের একটি সার্বজনীন সমস্যা বাল্যবিবাহ থেকে মা-বোনকে সচেতন হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কন্যা সন্তান কিন্তু কারও জন্য কোনো বোঝা নয়। এটি দেশের সম্পদ। তোমরা বিভ্রান্ত না হয়ে একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়ে নিজেদেরকে অর্থনীতির কাণ্ডারী করে তুলো। আমি বিশ্বাস করি তোমাদের হাত ধরেই একদিন বাংলাদেশ উন্নয়নের সর্বোচ্চে পোঁছাবে।’

শেরপুরের এসপি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ পরিসংখ্যায় শেরপুর জেলায় আত্মহত্যা ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সর্বাধিকসংখ্যক লোক মৃত্যুর এই কারণটি খোঁজার জন্য আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। এই বিষয়টি নিয়ে আমি আপনাদের সাাথে আবার বসব এবং খোঁজার চেষ্টা করছি। কী কারণে, দোষটি কার, যে মারা গেল শুধু তার, নাকি তার পরিবারের অবহেলার কারণে, নাকি সমাজিক কোনো সমস্যা নাকি আমাদের সরকারি কোনো অবহেলার কারণে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।’

জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের উন্নয়ন ও ভিশন ২০৪১ বিনির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাইকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান এসপি। পাশাপাশি এই উন্নতিতে বাধা সৃষ্টিকারী কিছু দুষ্ট চক্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

শেরপুরের নকলায় বিট পুলিশিং সমাবেশে এসপি মো. কামরুজ্জামান বিপিএমসহ অতিথিরা। ছবি: পুলিশ নিউজ

পরিশেষে পুলিশ সুপার ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন।

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘একটা কথা ভুললে চলবে না তোমাদের। তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’

মো. কামরুজ্জামান বিপিএম যেকোনো ধরনের অপরাধের তথ্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বা জেলা পুলিশের হট লাইন নম্বরে কল করে জানানোর আহ্বান জানান।

এসআই সুমন আহমেদের সঞ্চালনায় আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সোহেল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া, নকলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহসহ অনেকে।