মাকে হত্যা ও বাবাকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে ব্রাহ্মণপাড়া থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

রাগের বশে মাকে হত্যা করেছিল কিশোর ছেলে। এরপর বাবাকে সেই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানা-পুলিশের তদন্তে ঠিকই বেরিয়ে এসেছে মূল ঘটনা। পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে।

ব্রাহ্মণপাড়া থানা-পুলিশ জানায়, ২০ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে থানা-পুলিশ জানতে পারে, থানার লাড়ুচৌ এলাকায় হাত-পা বাঁধা এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। নিহত ওই নারীর নাম শিউলি আক্তার (৩৫)। তাঁর দুই পা বাঁধা, কপালে ও ডান চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম ছিল। শুরু হয় এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের প্রচেষ্টা।

ঘটনাস্থলে পৌঁছালেই নিহত শিউলির মা ঝর্ণা বেগম পারিবারিক কলহের কথা উল্লেখ করেন। এতে সন্দেহের তির যায় শিউলির স্বামী মো. সুমনের (৪৫) দিকে। তাঁর বিরুদ্ধে ২২ এপ্রিল হত্যা মামলা দায়ের হয়। সুমনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। বাবার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয় নিহত শিউলির বড় ছেলে (১৬)। তবে সন্দেহ যেন কাটছিল না। কারণ, হত্যাকাণ্ডের সময় আসামি সুমনের ঘটনাস্থলে থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্দেহ থেকেই নিহত শিউলির বড় ছেলেকে ২২ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডটি আসলে ঘটিয়েছে নিহত শিউলির বড় ছেলে (১৬)। এরপর ঘটনার মোড় সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিয়ে বাবাকে ফাঁসিয়েছে সে। জবানবন্দীর একপর্যায়ে ওই কিশোর জানায়, ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে বাইরে যায় ওই কিশোর। রাত ১১টার দিকে সে ঘরে ফেরে। এ সময় ধূমপান করা নিয়ে ওই কিশোরকে তার মা শিউলি বকাঝকা করেন। ওই কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও বকাঝকা করেন তিনি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই কিশোর তার মাকে লাঠি দিয়া পেটায়। এতে মা শিউলি আরও রেগে যান। ঠিক তখনই খাটের পাশ থেকে লোহার শাবল দিয়ে শিউলির কপালে আঘাত করে ওই কিশোর। এতে তিনি নিহত হন। এরপর ছোট ভাইয়ের শার্ট দিয়ে ঘরের রক্ত সব মুছে ফেলে ওই কিশোর। বিছানার চাদর দিয়ে নিহত শিউলির রক্তাক্ত মাথা বেঁধে এবং ওড়না দিয়া পা দুটো বেঁধে রাত ১টার দিকে মরদেহ বাড়ির পেছনে কিছু দূরে ডোবায় লাশ ফেলে দেয় সে। এরপর বাড়ি ফিরে গোসল করে রক্তামাখা বালিশটি গোয়ালঘরের টিনের ওপরে ফেলে। রক্তাক্ত তোষক উল্টে দেয় এবং শাবলটি ধুয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে। পরদিন সকালে তার নানি বাড়ি এলে সে জানায়, রাতে মা-বাবার ঝগড়ার পর মা বেরিয়ে গেছে। আর সকালে বাবা বাড়ি ফেরার পর বলে, শিউলি রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছেন। এরপর ওই কিশোরের তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবল, রক্তমাখা কাপড়, রক্তমাখা বালিশসহ বিভিন্ন আলামত বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।