রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবির ঘুরে দেখতে সোমবার নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছান জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল। ছবি: বিডিনিউজ

নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবির ঘুরে দেখেছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল। পরে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কর্মকর্তা নওশের ইবনে হালিম।

ইবনে হালিম বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ভাসানচরে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কার্যালয়ে আলোচনা সভায় তাঁরা এই সন্তোষ প্রকাশ করেন। খবর বিডিনিউজের।

২১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তারা রয়েছেন।

সোমবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকা থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে তাঁরা ভাসানচরে যান বলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার শাহ মো. রেজোয়ান হায়াত জানান।

কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক কাজ হিসেবে জাতিসংঘের দলটি ভাসানচরে গেছে। তারা কয়েক দিন সেখানে অবস্থান করবে বলে জানান শাহ মো. রেজোয়ান হায়াত।

নওশের ইবনে হালিম বলেন, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অফিসে ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপি কর্মকর্তারা প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক করেন। সভায় সাতজন ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি এবং অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

“সভায় তাঁরা ভাসানচরের সার্বিক বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।”

নওশের ইবনে হালিম বলেন, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বানৌজা ডলফিন নামে একটি জাহাজে করে জাতিসংঘের ২৫ জনের প্রতিনিধিদল, বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধি চারটি গাড়িসহ মালপত্র নিয়ে ভাসানচরে পৌঁছায়।

শুরুতে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করলেও সেই অবস্থান বদলে সম্প্রতি ভাসানচরে শরণার্থীদের জন্য কাজ শুরু করতে সম্মত হয় জাতিসংঘ। এ বিষয়ে গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও করে ইউএনএইচসিআর।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেছিলেন, “জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের মাধ্যমে কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও মানবিক সহায়তা পরিচালিত হবে। বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”

বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের যৌথ উদ্যোগে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন, চিকিৎসা, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে ভাসানচরে, যে কাজটি এত দিন সরকার একাই করে আসছিল।

বাংলাদেশ সরকার সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা এবং জাতিসংঘ, সহযোগী সংস্থা ও দেশি-বিদেশি এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে।

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। ২০১৭ সালে তার সঙ্গে যোগ হয় আরও সাত লাখ রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সহায়তায় জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছিল। তবে কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার যখন রোহিঙ্গাদের একাংশকে নোয়াখালীর জনবিরল দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাতে শুরুতে বিরোধিতা করে বিশ্ব সংস্থাটি।

এর মধ্যে গত দেড় বছরে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মানানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়, আর তাতে সফলতাও আসে।

বর্তমানে ভাসানচরে সাড়ে ১৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান।