মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী এখন জ্বালানি নিরাপত্তায় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন-প্রসার, জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার ও উন্নয়ন, জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চলমান ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি তেলের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি এবং জ্বালানি চাহিদা ও যোগানে উন্নত-অনুন্নত প্রতিটি দেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সেবা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা বলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ‘গণপ্রকৌশল দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আজ সোমবার দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গণপ্রকৌশল দিবস-২০২২’ ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইডিইবি’র সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি’ অত্যন্ত সময়োচিত হয়েছে বলে প্রশংসা করেন। খবর বাসসের।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন এবং গ্রামসহ সারাদেশে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করেন। জাতির পিতা ১৯৭৫ সালে বিদেশি তেল কোম্পানি শেল ওয়েল হতে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র-তিতাস, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও বাখরাবাদ- ক্রয় করে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতার এই যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তার গোড়াপত্তন ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ‘রূপকল্প-২০৪১’ অর্জনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের বহুমাত্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দৈনিক ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট হয়েছে। দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের সরকারের সময়ে সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ, ভোলা নর্থ ও জকিগঞ্জ নামে মোট ৫টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০০৯ সাল হতে জুন ২০২২ পর্যন্ত সময়ে ২১টি অনুসন্ধান, ৫০টি উন্নয়ন ও ৫৬টি ওয়ার্কওভার কূপ খননের ফলে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০০০ এমএমসিএফডি।’

জ্বালানি চাহিদা পূরণে পায়রা বন্দরে ফ্লোটিং স্টোরেজ রেজিষ্ট্রেশন ইউনিট (এফ এস আর ইউ) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে দৈনিক ১০০০ ঘনফুট ক্ষমতার ১টি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকার জ্বালানি খাতকে আধুনিক ও ডিজিটালাইজড করার জন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস ও কয়লার উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে আইডিইবির সদস্য প্রকৌশলীগণ টেকসই উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিরাপত্তায় সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জোরালো ভূমিকা রাখবেন। তিনি ‘গণপ্রকৌশল দিবস-২০২২’ ও আইডিইবি’র ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেছেন।