বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি।

২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশের যে স্বপ্নে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, সেই যাত্রাকে মসৃণ করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ উদ্বোধনকালে এই আহ্বান জানান। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা আসুন, বিনিয়োগ করুন, বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত আপনাদের আগমনের জন্য। বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেই বিনিয়োগ করুন।”

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) তাদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।

এই আয়োজনে সহায়তা দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী নেতাদের স্বাগত জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত, সমৃদ্ধ এবং উদ্ভাবনী স্মার্ট দেশ হিসেবে বিনির্মাণের জন্য আমাদের অভিযাত্রায় যুক্ত হতে আমি আপনাদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তৃতিমূলক সময় পার করছে।

তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের দেশের জন্য একই সঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে, আবার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

“কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমরা কঠোর বাণিজ্য প্রতিযোগিতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতাও অর্জন করব। আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছি।”

এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “এখানে কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আছে, সেগুলো আমরা মোকাবিলা করব, ইনশাল্লাহ।”

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী পরিবেশে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলেও কথা দেন তিনি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর অভিঘাত,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাণিজ্যিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোকে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি করেছে। এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বলে ব্যবসায়ী নেতাদের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন।

“সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন,” বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। সমৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে হবে যেখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

“আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে যে আমরা কোনোমতেই ব্যর্থ হবো না। যেকোনো ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হব প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ ঘটাতে। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে দরকার।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দরজি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক জিয়াংচেন ঝাং, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।