টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়াকে অনেকেই সম্ভাব্য জয়ীর তালিকায় রাখেনি। সেই অস্ট্রেলিয়াই দুর্দান্তভাবে সেমিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখে। এরপর গতকাল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নেয়। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বলেছেন, মূলত সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়টিই ছিল তাঁর দলের টার্নিং পয়েন্ট।

অস্ট্রেলিয়া এর আগে পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করলেও সপ্তম আসরে এসে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের প্রথম শিরোপার দেখা পেল অজিরা। গত রাতে দুবাইয়ে হওয়া সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। মূলত সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়টিকেই টুর্নামেন্টে নিজ দলের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।

সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এ বাংলাদেশকে এককথায় উড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। টাইগারদের ৭৩ রানে অলআউট করে দিয়ে মাত্র ৩৮ বল ও ২ উইকেট খরচ করেই জয় তুলে নেয় অজিরা। ৮ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ের সঙ্গে রানরেটও অনেকখানি বাড়িয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমেই সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে যায় ফিঞ্চের দল। কারণ, ওই সময় সেমিফাইনালের দৌড়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রোটিয়াদের টপকাতে হলে শুধু জয়ই নয়, রানরেটের হিসাবটাও বড়সড় ফ্যাক্টর ছিল। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতে রানরেটে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে যায় অজিরা। শেষ পর্যন্ত ওই রানরেটের ওপর ভর করেই সেমিতে ওঠে অস্ট্রেলিয়া।

এরপর সেমিতে পাকিস্তান ও ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলল অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ফিঞ্চ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা বিশাল অর্জন। সতীর্থরা পুরো আসরে যেভাবে লড়াই করেছে, তাতে আমি গর্বিত। অবশ্যই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়টা আমাদের টার্নিং পয়েন্ট। তখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। আমাদের শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর দরকার ছিল এবং দল ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আমরা সেটাই করেছি।’

দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করতে ভোলেননি ফিঞ্চ। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্নারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি, এমন কথা বিশ্বাস করতে পারি না। তবে এটা ভালো হয়েছে। কারণ, খোঁচা খেয়ে ভালুক জেগেছে। জাম্পা আমার কাছে টুর্নামেন্ট সেরা, ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছে, সঠিক সময়ে উইকেট শিকার করেছে। মিচেল মার্শ টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তিন নম্বর পজিশনে নির্ভরযোগ্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ইনজুরি নিয়ে খেলেও নিজের কাজটা দারুণভাবে করেছে ওয়েড। সেমিফাইনালে মার্কাস স্টয়নিসের সঙ্গে সেরা পারফর্মই করেছে সে। এরা ছাড়াও দলের সবাই পুরো আসরে ভালো খেলেছে।’

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মিচেল মার্শ। আর ৭ ম্যাচে ৪৮ দশমিক ১৬ গড়ে ২৮৯ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার টুর্নামেন্ট সেরা হবেন, তা আসর শুরুর আগেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে বলে রেখেছিলেন অধিনায়ক ফিঞ্চ। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্নার টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারে, এটা আপনি আশা করেননি? আমি অবশ্যই আশা করেছি। এক বর্ণও মিথ্যা বলছি না, কয়েক মাস আগে জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে ফোন করে বলেছিলাম, ওয়ার্নারকে নিয়ে চিন্তা করো না, সে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হবে।’

টুর্নামেন্টের মাঝপথে দলের স্পিনার এডাম জাম্পাও সেরা হতে পারেন বলে মনে করেছিলেন ফিঞ্চ, ‘টুর্নামেন্টের মাঝপথে মনে হয়েছিল, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জ্যাম্পাও পেতে পারে। কারণ, বল হাতে দারুণ করছিল সে।’

ফাইনালে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নিয়ে রান চেজ করে ম্যাচ ও বিশ্বকাপ জয় করে অজিরা। ফাইনালের মঞ্চে টস বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন ফিঞ্চ।

ফাইনাল জয়ের টার্নিং নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মুচকি হেসে অজি অধিনায়ক বলেন, ‘আমার আউট ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট। আমি আউট হওয়ার পরই ওয়ার্নারের সঙ্গে আক্রমণাত্মক জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডের ওপর চাপ বাড়িয়েছিল মার্শ। এমন সময় সেটির বড় প্রয়োজন ছিল।’