কেক কেটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের যুগপূর্তি উদযাপন করেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের যুগপূর্তি। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভা হয়।

বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান অতিথি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম।

বক্তব্য দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাননীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং পোশাক শিল্পের মালিক, উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম-এর হাতে স্মারক তুলে দিচ্ছেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শুধু কারখানার মালিক নয়, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। তারা মালিক-শ্রমিক সবার সমস্যা শুনে অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শিল্প এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। এটাকে পুঁজি করে কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বক্তব্য দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা মাননীয় সংসদ সদস্য সালমান ফজলুর রহমান। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি বলেন, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাকখাত। এ জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠন করা হয়। শিল্পাঞ্চল পুলিশ শ্রমিকদের জন্য কাজ করছে, সে সঙ্গে মালিকদের জন্যও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অতীতের সাফল্য অব্যাহত রেখে ভবিষ্যতেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ’অ্যাপ্রিসিয়েশন অব অ্যাক্সিলেন্স-২০২২’ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

আইজিপি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেশাদারি মনোভাব ও দক্ষতার মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখছে। ফলে শিল্পবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।

পুলিশপ্রধান বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের যাত্রা শুরুর আগে পোশাকখাতে রপ্তানি আয় ছিল ১২.৪৯ বিলিয়ন ডলার। পক্ষান্তরে ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাকখাতে রপ্তানি আয় হয় ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.৮২ ভাগ। গত এক যুগে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা অপরিসীম।

তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করছে।

পুলিশপ্রধান বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নিয়মিত কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং এবং ওপেন হাউস ডে সভার মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করছে। শিল্পাঞ্চলে মাদক ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বাড়াচ্ছে।

পুলিশপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সূচিত বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নের পথ ধরে তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ ও উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ নিম্নআয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পোশাকখাতে অসন্তোষ তৈরি হতো। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অনুরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়। এরপর থেকে শিল্পাঞ্চল এবং পোশাকখাতে নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রতিটি সদস্য।

তিনি আরও বলেন, পোশাকখাত নিয়ে গুজব কিংবা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়েও কাজ করে যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ’অ্যাপ্রিসিয়েশন অব অ্যাক্সিলেন্স-২০২২’ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া যুগপূর্তির আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি কেক কাটা হয়।

দেশের শিল্পখাত বিশেষ করে পোশাকশিল্পে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের যাত্রা শুরু হয়।