রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার সিএমইসির সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সূচনা হতে যাচ্ছে দেশে। ঢাকার আমিনবাজারে নির্মাণ করা হবে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার রসদ আসবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে।

১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে চীনের মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি) কোম্পানি। তারাই পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় জমি ও নিয়মিত বর্জ্য সরবরাহ করবে। আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ বিভাগ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফর ডটকমের।

এই লক্ষ্যে বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিএমইসির সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য লাগবে। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৮ টাকার বেশি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বলেন, বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ আবর্জনা প্রয়োজন হবে, তা সরবরাহ করলে শহরে ময়লার সমস্যা কেটে যাবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। কার্যক্রম শুরু হওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাবে চীনা কোম্পানিটি। এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় ও জেলা শহরের পৌরসভাগুলোতেও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেন তাজুল ইসলাম।

তিনি জানান, যেসব বিভাগীয় বা জেলা শহর অথবা পৌরসভা প্রতিদিন ৬০০ টন বর্জ্য সরবরাহ করতে পারবে, তারা বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সমন্বয় করে সরাসরি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারবে। জাপান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যে মডেল অনুসরণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, তার চেয়ে বাংলাদেশের জন্য ইনসিনারেশন, অর্থাৎ বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি সর্বোত্তম। এই পদ্ধতিতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘এটা একটা নতুন জিনিস আসতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা শহরের উত্তর অঞ্চলের বর্জ্য থেকে আমরা বিদ্যুৎ বানাব।’

এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সিএমইসির কাছ থেকে প্রায় ২১ সেন্ট দামে (প্রতি কিলোওয়াট ১৮ টাকার বেশি) কিনে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ গ্রাহকের কাছে ৫ সেন্ট মূল্যে বিক্রি করি, আর সেখানে নেওয়া হচ্ছে ২১ সেন্টে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘শূন্য কার্বন নিঃসরণের’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেই ‘কমিটমেন্ট’ থেকেই এত উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ।

বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এগিয়ে আসায় চীন সরকারের পাশাপাশি সে দেশের সরকারি কোম্পানি সিএমইসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘তারা আমাদের দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রথমবারের মতো বিনিয়োগ করছে। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প। পরে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছি এই প্রকল্পের মধ্যে।’

বিদ্যুৎ-চালিত বাসের দিকে যাওয়ার আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

ঢাকা শহরে ডিজেলচালিত বাসগুলোকে ধীরে ধীরে বিদ্যুতে রূপান্তর করতে ঢাকা উত্তরের মেয়রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সেই পরিকল্পনা নিলে তা বাস্তবায়নের জন্য পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলে আসছি, ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম যেন বিদ্যুতে চলে আসে। সারা বিশ্বে ধারাবাহিকভাবে বাস সার্ভিস, থ্রি হুইলার সার্ভিস সব এখন বিদ্যুতে চলে।

‘যেসব গাড়ি বিদ্যুতে চলে, সেগুলো ইফিশিয়েনসি হচ্ছে ৮০ শতাংশ, আর তেল দিয়ে যে গাড়ি চলে, তার ইফিসিয়েনসি মাত্র ২০ শতাংশ।’

গণপরিবহন তেলের পরিবর্তে বিদ্যুতে রূপান্তর করলে ভাড়া এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী মেয়রের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যদি ঢাকা উত্তরের ব্যাপারে একটি ডিক্লারেশন দেন, আমরা আস্তে আস্তে লেস কার্বন ইমিশনের দিকে যাব, তাহলে এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ এবং সামনে যে বৈদ্যুতিক বাস আসবে, তা আপনার চিন্তাভাবনার মধ্যে থাকবে। এই জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ সব সময় আপনাদের সাথে থাকবে।’

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বক্তব্যের আগে মেয়র আতিকুল ইসলাম ঢাকার বাসগুলোকে বিদ্যুৎ-চালিত বাসে রূপান্তর করা অথবা বিদ্যুৎ-চালিত নতুন বাস আমদানির পরিকল্পনার কথা বলেন।

তিন বছরের মধ্যে মাটির নিচে যাবে বিদ্যুতের লাইন

আগামী তিন বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের বিদ্যুতের লাইনগুলো মাটির নিচে নিতে কাজ শুরু হওয়ার কথা অনুষ্ঠানে বলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে বৈদ্যুতিক লাইনগুলো মাটির নিচে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। আগামী তিন বছরের মাথায় ঢাকা শহরের সমস্ত বৈদ্যুতিক লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাচ্ছি।’

ইন্টারনেট ও কেবল টিভির তারও রাস্তার ওপরে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে সরানোর জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সম্মিলিতভাবে প্রয়াস চালাই, তাহলে আমাদের বৈদ্যুতিক পুলগুলো থেকে তার অপসারণ করে ঢাকার আরও সৌন্দর্যবর্ধন করা যাবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং উপস্থিত ছিলেন।