বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত আলোচনা সভা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেছেন, আমাদের চার হাজার বছরের ইতিহাস। আমরা পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারিনি বিধায় বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেদেরকেও আবির্ভূত করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ সময়ে বাঙালি জাতিকে জাতি হিসেবে গঠন করে তাঁর সত্তার স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেছেন, সেটা বিস্ময়কর।

‘দিশারী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করছেন অতিথিগণ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত আলোচনা সভা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আইজিপি এসব কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ৫১টি ইউনিট ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং ‘দিশারী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এক কিশোরীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন আইজিপি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

আইজিপি বলেন, যাঁরা অবয়বে বাঙালি জাতিসত্তার অংশ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নয়, তাঁরা ভেতর থেকে ঘুণ পোকার মতো আমাদের খেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ যেমন আগেও ছিল, এখনো আছে। এই চ্যালেঞ্জের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, আমাদের যে মুক্তির কাণ্ডারি, তাঁদেরকেও হারিয়েছি। আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই জাতিকেই সোচ্চার হতে হবে, সতর্ক হতে হবে। আমাদের প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এক নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মুখ্য আলোচক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের বটবৃক্ষ, তাঁর ছায়ায়, প্রচ্ছায়ায় আমাদের অস্তিত্ব নির্মাণ করেছি, অস্তিত্ব ধারণ করব যত দিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে তত দিন। বঙ্গবন্ধু আমাদের বটবৃক্ষ আর বটবৃক্ষের ছায়াবৃক্ষ ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এক শিশুর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন আইজিপি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করার দৃষ্টান্ত রহিত নয়, কিন্তু সপরিবারে স্বজন-পরিজনসহ একই দিনে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ১৯ জনকে হত্যা করার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর নেই। এমনকি ১০ বছরের শিশু রাসেলও বাদ যায়নি। বঙ্গবন্ধুর ৫৫ বছর ৪ মাস ২৯ দিনের জীবন, তাঁর মধ্যে তিনি শুধু বাঙালিকে দেওয়ার চেষ্টাই করেছেন, কোনো কিছু নেওয়ার চেষ্টা করেননি, আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গমাতা যখন সিঁড়িতে শেখ মুজিবের নিথর দেহ দেখলেন, তিনি তখন হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। খুনিরা তাঁকে সরাতে চেষ্টা করল, আপনি এখান থেকে সরে দাঁড়ান। বঙ্গমাতার উত্তর ছিল, তোমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছ, আমাকেও হত্যা করো। খুনিরা ব্রাশফায়ার করে বঙ্গমাতাকে হত্যা করেছিল। সেদিন ৩২ নম্বর সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতার রক্ত মিশে গিয়েছিল। এটা স্বামী-স্ত্রীর আত্মিক পরিচয় বহন করে।

কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এক কিশোরের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন আইজিপি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যা আমাদের ইতিহাসের কৃষ্ণতম অধ্যায়। রাজনৈতিক মতভিন্নতা থাকতে পারে, মতান্তর থাকতে পারে, কিন্তু হত্যা কোনো উত্তর নয়। এখান থেকেই বোঝা যায়, খুনিদের পেছনে অনেক কিছু কাজ করেছে। একটি দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তিনি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। যদিও দুজন আসামি এখনো পলাতক রয়েছে।

১৫ আগস্ট আমাদের কাছে এখনো ধোঁয়াশা উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ১৫ আগস্ট সম্পর্কিত একটি কমিশন চাই, যার মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশিত হবে। ইতিমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট একটি কমিশন করার কথা বলেছেন। আমি আশাবাদী, ১৫ আগস্ট সম্পর্কিত একটি কমিশন হবে।

তিনি বলেন, দেশের প্রতি বঙ্গমাতার ভালোবাসা কেমন ছিল, বঙ্গবন্ধুর কাছে তাঁর লেখা একটি চিঠি এর প্রমাণ। তিনি চিঠিতে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, আমার স্বামী হওয়ার জন্য আপনার জন্ম হয়নি। আপনার জন্ম হয়েছে দেশের সেবা করার জন্য। আপনি দেশের সেবা করেন, আল্লাহ আমাকে দেখবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যাঁরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, তাদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানের দিকে পরিচালিত করার যে চেষ্টা ছিল, সেটা থেকে আমরা অবশ্যই আমাদের দেশকে মুক্ত করতে পারব। পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন দখল করে এই শত্রুদের দেখিয়ে দিতে চাই, আমরা তোমাদের মতো বিশ্বাসঘাতক নই, আমরা প্রকৃতপক্ষে বাঙালি।

তিনি আরও বলেন, বাঙালির মুক্তিদাতা জাতির পিতাকে আমরা বুকে ধারণ করি, আদর্শে ধারণ করি। তাঁর দেখানো আদর্শ নিয়ে এ দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কিশোরদের কুইজ প্রতিযোগিতা ও বড়দের রচনা প্রতিযোগিতা। গত ২৫ জুলাই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ ছাড়া ২৯ জুলাই পুলিশ সদস্যরা এই কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।