বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শেরপুরে বিভিন্ন আয়োজনের খণ্ডচিত্র। কোলাজ: পুলিশ নিউজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শেরপুরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে রোববার সকাল ১০টার দিকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় চত্বর থেকে বের হয়ে সুসজ্জিত পুলিশ বাদক দলের ব্যান্ডের তালে তালে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালিটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক, জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাহেলা আক্তার, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান বিপিএম, সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানুসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

র‍্যালির পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ হয়।

সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলার এসপি মো. কামরুজ্জামান বিপিএম।

পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য, জাতীয় চার শহীদ নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

পরে বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল জীবনের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার কাজে মনোনিবেশ করেন। ওই সময় বিশ্ব মিডিয়ায় তাঁর বিষয়ে প্রবল আগ্রহ থাকায় তিনি আন্তর্জাতিক মনোযোগের বলা যায় কেন্দ্রে ছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের জন্য শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। ১৪০টি দেশের ২০০ প্রতিনিধির সবাই সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন।”

এসপি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের বিশাল সমাবেশে বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক পরিয়ে দেন। এই পদক ছিল জাতির পিতার কর্ম ও প্রজ্ঞার সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সেই অনুষ্ঠানে রমেশচন্দ্র বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।’”

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ সম্মান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতাসংগ্রামের বীর সেনানীদের। জুলিও কুরি শান্তি পদক সমগ্র বাঙালি জাতির।’

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা সর্বপ্রকার অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দুনিয়ার সকল শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী বলেই বিশ্বের সব দেশ ও জাতির বন্ধুত্ব কামনা করি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এই নীতিতে আমরা আস্থাশীল।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর শান্তিবাদী নীতির আলোকেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশকে যাতে পরাশক্তিগুলোর ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হতে না হয়, সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছেন। এ বিষয়ে তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, কোনো যুদ্ধকে বাংলাদেশ সমর্থন করে না। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন, তা তাঁর বৈশ্বিক মাপের শান্তিবাদী নেত্রীর গুণাবলিকে তুলে ধরেছে। শান্তির দূত জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তাঁর কন্যা বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন। এ আমাদের জন্য মহাগৌরবের কথা।’