ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় মহাসড়কে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হতো ব্যবসায়ীদের। পুলিশের পদক্ষেপের কারণে বগুড়ায় এবারের চিত্র ভিন্ন।

মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। এবার পশুবাহী ট্রাকে পথে পথে কোথাও দিতে হচ্ছে না চাঁদা।

বগুড়া জেলা পুলিশের ব্যতিক্রম উদ্যোগের কারণেই মহাসড়কে এ স্বস্তি।

পথে পথে চাঁদা দেওয়ার ঝামেলা না থাকায় গরু ব্যবসায়ীরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তাঁরা বাড়তি দাম চাইছেন না। ফলে গরুর দামও রয়েছে ক্রেতাদের নাগালেই।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দিনে ও রাতে বগুড়ার বিভিন্ন পশুর হাট ও মহাসড়ক ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

কী বলছেন ব্যবসায়ীরা

দিনাজপুর থেকে ১৭টি কোরবানির গরু কিনে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন ব্যবসায়ী আলম শেখ। বৃহস্পতিবার রাত ২টায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে বগুড়া শহরতলির নওদা পাড়া এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে সেই গরুবাহী ট্রাক। সেখানে কথা হয় আলমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, হাটের টোল ছাড়া পথে কোথাও চাঁদা দিতে হয়নি। এভাবে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে পারলে গরুর দাম বেশি হবে না। ক্রেতারা নাগালের মধ্যেই তাঁদের কোরবানি কিনতে পারবেন।

রাত আড়াইটায় মাটিডালী মোড়ে দেখা মিলে গরু ব্যবসায়ী আসালত জামানের। তিনি রংপুরের শঠিবাড়ি থেকে গরু কিনে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার গাবতলী হাটে। তিনি বলেন, এবার মহাসড়কে কোনো ঝামেলা নেই। চাঁদা তো দূরের কথা, পুলিশ কিংবা পরিবহন সংগঠনের শ্রমিকেরা কোথাও ট্রাক থামানোর সংকেতও দিচ্ছে না।

বগুড়ার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছাগলের দাম কিছুটা বেশি হলেও গরুর দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

যা বলছেন ক্রেতা

বগুড়া শহরতলির গোদার পাড়া এলাকার সেলিম ৯১ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, গোখাদ্যের দাম অনেক বাড়ার পরেও গরুর দাম তেমন বাড়েনি। আমি ৯১ হাজার টাকায় যে গরু কিনেছি, তার দাম ১ লাখ টাকার ওপরে হওয়ার কথা। কিন্তু হাটে গরুর আমদানি বেশি হওয়ায় নাগালের মধ্যেই দাম রয়েছে।

এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বগুড়া জেলায় চাহিদার তুলনায় ৬৮ হাজার কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গরু, ছাগল ভেড়া। আর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি গরু, ছাগল, ভেড়ার।

পুলিশের পদক্ষেপ

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দল গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ পরবর্তী বগুড়া জেলার সীমানা থেকে শুরু করে বগুড়া জেলার সীমানা সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা পর্যন্ত একাধিক দলে ভাগ হয়ে গরু ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

কোরবানির পশুবাহী ৮টি ট্রাকে গোয়েন্দা পুলিশের ১৬ জন সদস্য গরু ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে গরুর ট্রাকে গোবিন্দগঞ্জ থেকে রওনা হন।

জেলা ডিবির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, বগুড়া জেলার সীমানা পর্যন্ত মহাসড়কে গরুর ট্রাকে কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়নি। কোরবানি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ডিবি পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম বলেন, মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে ঢাকার একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দল ছদ্মবেশে পশুবাহী ট্রাকে অবস্থান করে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, মহাসড়কে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা নেই। তার পরেও ছদ্মবেশে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ মহাসড়কে কোরবানি পশুবাহী যানবাহনে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

জেলা পুলিশের পদক্ষেপে গরু ব্যবসায়ী, ট্রাকমালিক ও শ্রমিক, হাটের ইজারাদার ও সর্বস্তরের জনসাধারণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।