ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। ছবি: পুলিশ নিউজ

সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সরবরাহকারী চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে ৬টি ইয়ার ডিভাইস, ৬টি মাস্টার কার্ড সিম হোল্ডার, ব্যাংকের ৫টি চেক, ৭টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ৬টি বাটন মোবাইল ফোন, ১১টি প্রবেশপত্র এবং চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া ৩ সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইল এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজিব আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। তাঁদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ সিজিএ অফিসের সরকারি কর্মকর্তা এবং মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান।

পুলিশ জানায়, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গতকাল ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন আসামি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সরবরাহ করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইল এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে অসদুপায় অবলম্বন করা দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাফরুল থানাধীন সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিভিন্ন ডিভাইস, প্রশ্নপত্রসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবির আরেকটি দল বিজি প্রেস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যে অপর আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী প্রশ্নপত্র ফাঁসের জেরে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। গ্রেপ্তার আসামিরা বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। এরপর হলের বাইরে ওয়ান-স্টপ সমাধান কেন্দ্র স্থাপন করে স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।