করোনাভাইরাস সংক্রমণের একাধিক ঢেউ নাড়িয়ে দিয়ে গেলেও সরকারের দ্রুত ও সময়োচিত পদক্ষেপে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ।
আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থা বলছে, সংক্রমণের হার কমে আসায় এবং সরকারের অনুকূল নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

বাংলাদেশ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। এই সফরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় তাদের এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয় বলে শনিবার আইএমএফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

মহামারীর শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হওয়ার হিসাব দেয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

এ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে গত অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে।

আইএমএফ বলছে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্য, বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়ায় অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সরকারের হিসাবের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে।
স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে মহামারীর কারণে ব্যয় বাড়ায় এ অর্থবছর সরকারের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৬.১ শতাংশ।

তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি এ অর্থবছর আরও বাড়বে বলেই আইএমএফ মনে করছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজনে বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা।

মহামারীর মধ্যে গত দুই বছরে সরকারের ধার বেড়ে গেলেও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং দেশে টিকাদান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঋণের বোঝা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে খুব বেশি ঝুঁকি দেখছে না আইএমএফ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এই গতিপথ ধরে রাখতে পারলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে আইএমএফ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

তবে সার্বিক বিবেচনায় সামনের দিনগুলোতে যে বেশ কিছু অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি রয়েছে, তাও জানিয়েছে আইএমএফ।

সেজন্য রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদনমুখী বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের নীতি কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্ষত সারিয়ে অর্থনীতি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য সরকারের সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া জরুরি। সেই সাথে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে হবে।

সেজন্য রাজস্ব খাতের আধুনিকায়ন, রাজস্ব ব্যয়ের যৌক্তিকিকরণ, সঞ্চয়পত্রকে বাজেটের সরাসরি অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত না রাখা এবং জ্বালানির দাম নির্ধারণে একটি আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে আইএমএফ।