পুলিশের সহায়তায় সুস্থ হয়ে ওঠেন মো. সুমন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেমের কাজ করেন ২২ বছর বয়সী মো. সুমন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে বিয়েবাড়িতে সাউন্ড ও লাইটিংয়ের কাজ শেষ করে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।

জিইসি মোড়ের আক্তারুজ্জামান উড়ালসড়কে ওঠার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় থাকা পাঁচ ছিনতাইকারী সুমনের পথরোধ করে তাঁর মোবাইল ও তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে সুমনকে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ছিনতাইকারীরা। তারা রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধরও করে তাঁকে। সূত্র প্রথম আলো।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ছুরিকাঘাত ও মারধরে আহত সুমন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন উড়ালসড়কের ওপর। ওই সময় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন খুলশী থানা টহল পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান সুমনকে।

ছেলের আহত হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান দিনমজুর বাবা আবুল কালামও। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলের জন্য রক্ত জোগাড় ও ওষুধ কিনতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান তিনি। সে সময় সুমনের পাশে দাঁড়ান খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা। রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনিসহ থানার ছয় সদস্য।
রক্তের গ্রুপ মেলায় খুলশী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাজীব আহমেদ ও কনস্টেবল মো. মনির দুই দিন দুই ব্যাগ রক্ত দেন।
ডিসি রোডের সালামের কলোনিতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা সুমনের বাবা আবুল কালাম জানান, পুলিশ সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে না গেলে ছেলের মৃত্যুও হতে পারত। এর বাইরে চিকিৎসা ব্যয় বহন করার মতো টাকাও ছিল না তাঁর। সুমনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত দেখাশোনা করতে আসতেন। যখন রক্তের জন্য ছোটাছুটি করে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন দুই পুলিশ সদস্য রক্ত দিয়েছেন।
পুলিশের সহযোগিতার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন বলেও জানান পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুল কালাম।
এদিকে সুমনকে ছুরিকাঘাতকারী ছিনতাইকারীদের খুঁজতে থাকেন খুলশী থানা পুলিশের অন্য সদস্যরা। পরের দিনই এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোবারক হোসেন, হারুন রশিদ, মহিউদ্দিন ও রিদোয়ান নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত অটোরিকশা ও ছুরি জব্দ করা হয়।

চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার চিকিৎসক আবদুর রহিম বলেন, ‘সময়মতো পুলিশ সদস্যরা রক্ত না দিলে ওই রোগীকে (সুমনকে) বাঁচানো কষ্টকর হতো। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফিরে যান সুমন।’

কাজের প্রয়োজনে বর্তমানে ঢাকায় আছেন সুমন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘রক্ত, ওষুধ কেনা থেকে শুরু করে চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়া—সবই করেছেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা পাশে না থাকলে সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন হতো।’

পুলিশ যাতে সত্যিকার অর্থে মানুষের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য নানা সময়ে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

তিনি বলেন, খুলশী থানা পুলিশের এ কাজ দেখে অন্য সদস্যরাও যেন উৎসাহিত হন।