জিএমপির সদর থানা-পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার চার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানা-পুলিশের পরিচয় দিয়ে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অভিনব কায়দায় টাকা চুরি করে আসছিল চক্রটি। অবশেষে জিএমপির সদর-থানা পুলিশের অভিযানে এই চক্রের মূল হোতাসহ চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। গাজীপুরের সালনা ও আশুলিয়া এলাকায় ১০ অক্টোবর (সোমবার) রাতে এসব অভিযান পরিচালিত হয়।

গ্রেপ্তার চার আসামির নাম মো. রুবেল রানা (২৬), মো. তুষার ইসলাম (৩৭), মো. সবুজ মোল্লা (৩৪) ও মো. খাইরুল ইসলাম(৩১)।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ১০ অক্টোবর জিএমপির সদর থানা-পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে একজন ভুয়া পুলিশ সালনা বাজারের ওভারব্রিজের নিচে অবস্থান করছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে রাত সোয়া ৯টার দিকে সদর থানা-পুলিশের একটি দল সালনা বাজারের ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের আন্ডারপাসের নিচে অভিযান চালিয়ে রুবেলকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি প্লাস্টিক কার্ডে ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড (যেখানে রুবেল নামসহ হুবহু পুলিশের আইডি কার্ডের মতো যাবতীয় তথ্য আছে), একটি কালো রঙের ওয়াকিটকি, দুটি আলাদা কালো অ্যান্টেনা, ছয়টি বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড, সাতটি বিভিন্ন অপারেটরের সিম, একটি আইফোন ১৩, পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বাংলাদেশ পুলিশ লেখা নীল রঙের একটি নোটবুক জব্দ করা হয়।

পরে রুবেলকে নিয়ে তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি পুলিশের বেল্ট, একটি খেলনা পিস্তল ও পিস্তলের একটি কাভার, দুটি পুলিশ লেখা সাদা খাম (যেখানে ফর্মড পুলিশ ইউনিট, বাংলাদেশ পুলিশ লেখা আছে), একটি কম্পিউটার, দুটি জাল সার্টিফিকেট (বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা কর্তৃক দাখিল পরীক্ষার সনদ, যেখানে আরিফ হাসান নাম লেখা আছে এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা কর্তৃক আলিম পরীক্ষার সনদ, যেখানে আরিফ হাসান নাম লেখা আছে) উদ্ধার করা হয়।

উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রুবেলের দেওয়া তথ্যমতে, আশুলিয়া থানার পশ্চিম জিরাবো হারিজ মেম্বারের মার্কেটে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভুয়া আইডি ফাইল সংবলিত দুটি হার্ডডিস্ক ও সিপিইউসহ তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সবুজ ও খাইরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, যেসব এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে বেতন হয়, সেসব এলাকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে ভূয়া পুলিশ পরিচয় দিয়ে পুলিশের আইডি কার্ড ও ওয়াকিটকি প্রদর্শন করে বিভিন্ন এটিএম বুথের সামনে অবস্থান করত। এ সময় বেতন গ্রহণকারী শ্রমিক এটিএম বুথের সামনে এসে বেতন তোলার চেষ্টা করলে তারা নিজ থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বেতন তোলায় সহায়তা করতে এগিয়ে যেত। চক্রটি বেতন গ্রহণকারী শ্রমিকের কাছ থেকে তার এটিএম কার্ডটি নিয়ে কার্ড না প্রবেশ করিয়েই পাসওয়ার্ড জিজ্ঞাসা করে পাসওয়ার্ড জেনে নিত। তারপর সুকৌশলে একই ব্যাংকের অচল কার্ড প্রবেশ করাত। কার্ডটি এটিএম বুথে আটকে যাওয়ার পর শ্রমিকের এটিএম কার্ডটি কৌশলে পকেটে রেখে দ্রুত অন্য বুথে গিয়ে সব টাকা উত্তোলন করত। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো।

উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান, চক্রটি পুলিশের পোশাক পরা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করত। তারপর গোপনে ভিডিও করে রাখত। পরে সেই ভিডিও দিয়ে তারা ব্ল্যাকমেল করে বিপুল পরিমান অর্থ আদায় করত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কেউ মামলা করলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রতারণার মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।