দক্ষ ও যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়তে সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদে গত তিন বছরে ১২ হাজার ৮৬৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে কনস্টেবল থেকে এএসপি পর্যন্ত ৭ হাজার ১৫৪ জনকে পদোন্নতি দিয়েও নতুন রেকর্ড গড়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।

পদোন্নতি জট তৈরি না হওয়ায় এখন পুরোদমে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছেন সর্বস্তরের পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি পাওয়ায় পেশাদারির সঙ্গে তাঁরা নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের নিচের স্তরের সদস্যদের পদোন্নতির ক্রমবর্ধমান ধারা, বাহিনীর সদস্যদের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক। গত তিন বছরে পদোন্নতিতে কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা নিচের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে খুব সহজেই অনুমেয়-

*নায়েক পদে ২০১৪ জনের পদোন্নতি*

পুলিশ বাহিনীতে নায়েক পদে তিন বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন ২ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪৮ জন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৮০ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৮৬ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।

*এএসআই পদে পদোন্নতি ২৬৪৩ জনের*

এএসআই/এটিএসআই পদে তিন বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন ২ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮৯ জন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ২০৯ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৪৫ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।

*এসআই পদে পদোন্নতি ১২১১ জনের*

এসআই/টিএসআই পদে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন ১ হাজার ২১১ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৪৬ জন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৫৮ জন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০৭ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।

*ইন্সপেক্টর পদে ১২০১ জনের পদোন্নতি*

ইন্সপেক্টর পদে তিন বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন ১ হাজার ২০১ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৫৮ জন (বিভাগীয়), ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪৩ জন (বিভাগীয়) এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০০ জন (বিভাগীয়) পদোন্নতি পেয়েছেন।

*এএসপি পদে ৮৫ জনের পদোন্নতি*

এএসপি পদে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ জন এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। অর্থাৎ দুই বছরে এই পদে ৮৫ জনের পদোন্নতি ঘটেছে। এমনকি ২০২০ সালে পুলিশের সশস্ত্র শাখায় কর্মরত ইন্সপেক্টর হতে এএসপি পদে ১৬ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। সশস্ত্র শাখায় এ পদোন্নতি স্বাধীনতা উত্তর যে কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক বলে বিবেচিত।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত ও আধুনিক দেশের পুলিশ বাহিনীর সমকক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তার মধ্যে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তিনি পদোন্নতির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নায়েক পদ থেকে এএসপি পদ পর্যন্ত কাঙ্খিত সময়ে পদোন্নতির বিষয়ে জোর দিয়েছেন। অগ্রাধিকার দিয়েছেন মেধাবী, সৎ ও যোগ্যদের পদোন্নতিতে। ফলে কেন্দ্র থেকে প্রান্তের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।

মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ‘জনগণের পুলিশ’ বিনির্মাণের প্রত্যয়কে ধারণ করেছেন আইজিপি মহোদয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প-২০৪১’ অর্জনের মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্রের উপযোগী ও আধুনিক পুলিশ বাহিনী গড়তে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের প্রচলিত ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট এবং ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের উদ্যোগে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন সদস্যদের কেন্দ্রীয়ভাবে পদোন্নতি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে সবচেয়ে মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন। প্রক্রিয়াটি সব মহলেই ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। অধস্তন পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মোদ্দীপনা।

মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন, বিপিএম, পিপিএম, এআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১), বাংলাদেশ পুলিশ।