‘চাকরি নয় সেবা’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ পুলিশে প্রথমবারের মতো নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগপ্রক্রিয়া ২৬ নভেম্বর সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কনস্টেবল পদে মেধা ও শারীরিক সক্ষমতার বিচারে অধিক যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২৫ অক্টোবর। তিন হাজার শূন্য পদের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৮ জন। প্রার্থীদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৩৪ জন এবং নারী ১৬ হাজার ৪৩৪ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই শেষে ২৩ হাজার ৬৯৭ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ২১ হাজার ৭৫৯ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৯৩৮ জন নারী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছেন ৩ হাজার।

সংশোধিত নিয়োগ বিধি অনুযায়ী কনস্টেবল নিয়োগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল মেধা ও শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা। দেশের ৬৪ জেলায় চলে এ নিয়োগপ্রক্রিয়া। কোনো ধরনের তদবির কিংবা অর্থের লেনদেন ছাড়াই নিরপেক্ষভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ নিয়োগপ্রক্রিয়া পুরো দেশে সাড়া ফেলেছে।

এবারের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের যেমন দিনমজুর, কৃষকের সন্তানেরাই বেশি চাকরি পেয়েছেন। এসব পরিবারের সন্তানদের কাছে মাত্র ১৩৩ টাকা ফি দিয়ে পুলিশে চাকরি পাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। চাকরি পেয়ে আনন্দে তাঁদের অনেকেরই চোখ ভিজে উঠেছিল। আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তাঁদের মা-বাবারাও।

সাত ধাপে কনস্টেবল পদে এই নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে প্রাথমিক বাছাই, দ্বিতীয় ধাপে শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল এ্যানডুরেন্স টেস্ট, তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষা, চতুর্থ ধাপে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, পঞ্চম ধাপে প্রাথমিক নির্বাচন, ষষ্ঠ ধাপে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সপ্তম ও সর্বশেষ ধাপে চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ করা হয়। প্রার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা সাতটি ইভেন্টের মধ্য দিয়ে যাচাই করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছিল দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প, হাই জাম্প, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইম্বিং।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগের লক্ষ্যে প্রথমেই পিআরবি সংশোধনের উদ্যোগ নেন। পিআরবি সংশোধন শেষে সফলতার সঙ্গে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং প্রার্থীদের নিয়োগপ্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত করার লক্ষ্যে খাগড়াছড়িতে এপিবিএনের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ভিডিও পুলিশের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার করা হয়। গবেষণার ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পিটিসি টাঙ্গাইলে ‘মক’ নিয়োগ পরীক্ষারও আয়োজন করা হয়।

প্রার্থীদের নতুন নিয়মে নিয়োগ পরীক্ষায় অভ্যস্ত করতে শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, এপিবিএনসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের ইভেন্টের অনুশীলন পরিচালনা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। মাঠপর্যায়ে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিয়োগসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের একাধিক ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স (টিওটি) কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ এবং ওয়েব বেজড স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। কনস্টেবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে অসাধু উপায় অবলম্বন করতে না পারে, সে জন্য পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া চলাকালীন পুলিশ অত্যন্ত তৎপর ও সচেষ্ট ছিল। কয়েকটি জেলায় কনস্টেবল নিয়োগে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

কনস্টেবল নিয়োগ সম্পর্কে আইজিপি বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। এবারের কনস্টেবল নিয়োগ সে প্রক্রিয়ারই অংশ। এ জন্য বর্তমান নিয়োগ বিধি সংশোধন করা হয়েছে।’ তিনি নিয়োগ বিধি সংশোধনে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

আইজিপি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্দমনীয় সাহস ও সুযোগ্য নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমরা পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেধা ও শারীরিকভাবে অধিক যোগ্য প্রার্থীদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ করেছি।’

অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় ড. বেনজীর আহমেদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ভবিষ্যতে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধা ও শারীরিক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরাই নিয়োগ পাবেন।