ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম-এর সঙ্গে সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ। এ সময় স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার) উপস্থিত ছিলেন। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে চমৎকারভাবে পালন করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশ এয়ার উইংয়ের প্রথম নারী পাইলট ফাতেমা তুজ জোহরার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মাননা স্মারক প্রদান, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার)।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম, সাবেক ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, এসবির ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি আমেনা বেগম বিপিএম প্রমুখ।

বাংলাদেশ পুলিশে নারীদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে চারজন নারী ডিআইজি, ২৪ জন নারী অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৬৪ জন নারী পুলিশ সুপার রয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশের সংখ্যা দুই ভাগ থেকে বেড়ে বর্তমানে আট ভাগে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্য সংযোজনের ফলে আমাদের সক্ষমতার মাত্রা অনেক বেড়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশে নারীর পদচারণা এক সময় এতটা মসৃণ ছিল না। তখন তাঁদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে নারীদের অবস্থান আজ সুদৃঢ় হয়েছে পূর্বসূরীদের দেখানো পথ ধরে। আজকে নারী পুলিশ সদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগমের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশপ্রধান বলেন, নারীরা যত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেব, তাঁরা ততো এগিয়ে যাবেব। করোনার সময় যখন মানবিকতার চরম বিপর্যয় ঘটেছে, তখন বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে নারী পুলিশ সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

নারী ভিকটিমদের সুরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, নারী পুলিশ সদস্যরা নারী ভিকটিমদের সহায়তা দিচ্ছেন। এতে নারীদের কাছে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ট্রিপল নাইন আজ একটি আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখানেও রয়েছে নারী পুলিশ সদস্যদের অনবদ্য অবদান।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করছেন সংগঠনের সভাপতি আমেনা বেগম বিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

নারীর অধিকারের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমি যদি আমার অধিকার পেতে চাই, তবে আমাকে সোচ্চার হতে হবে। যোগ্যতা প্রমাণের মধ্য দিয়ে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা দেশ ও দেশের বাইরে মেধা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তাঁদের সক্ষমতার প্রমাণ রাখছেন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে শুধুমাত্র নারী পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। নির্যাতিত নারীদের মানসিক ও আইনি সেবাসহ বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন নারী পুলিশ সদস্যরা।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে নারীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশে নির্দিষ্ট করে আলাদাভাবে নারী দিবস পালনের দরকার হবে না। প্রযুক্তিগত শিক্ষায়ও আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক এগিয়ে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. তানিয়া হক বলেন, অনলাইনে নিরাপদ বিচরণের জন্য জাতীয় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আইনের যথাযথ প্রচার, প্রসার ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে নারীদেরও নিজের আইনি অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই সব মানুষের সমান অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানসিকতা নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে সমতা আনতে হবে।

সাবেক ডিআইজি মিলি বিশ্বাসের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, ইন্টারনেটে সাইবার প্ল্যাটফর্মে নারীরা নিরাপদ নন। ফলে তাঁরা নানাভাবে হয়রানি, বুলিংয়ের শিকার হন। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে নারীদের সহয়তার জন্য সাইবার স্পেসে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার কেন্দ্রিক আমাদের অন্যান্য ইউনিটও রয়েছে। আমরা যদি সাইবার স্পেসে সেফটি আ্যন্ড সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে নারীদের ক্ষেত্রে বড় বাধা কেটে যাবে। পুলিশ হিসেবে আমাদের ওপর সে দায়িত্ব বর্তায়।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে, নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে, তাঁদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আনতে হবে। পাশাপাশি সব নারীকে সমান সুযোগ করে দিতে হবে। এই কাজের দায়িত্ব যেমন পুরুষ সহকর্মীদের, তেমনি নারীদেরও দায়িত্ব আছে। নারীদেরও আগামীর অগ্রগতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজেকে নারী হিসেবে না দেখে কর্মকর্তা হিসেবে ভাবতে হবে। তবেই আমরা এগুতে পারব।

‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি রওশন আরা বেগম (মরণোত্তর), সাবেক ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, বাংলাদেশ পুলিশ এয়ার উইংয়ের প্রথম নারী পাইলট ফাতেমা তুজ জোহরা এবং বিপিডব্লিউএনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।