গ্রেপ্তার দুই আসামি। ছবি : পুলিশ নিউজ

প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হত্যা করাই তাঁর নেশা। এক মাসের ব্যবধানে দুটি হত্যাকাণ্ডও ঘটান। আরও একটি হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।এর আগেই পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়েন।

জানা যায়, প্রেমিক সেজে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বুদ্ধি অন্যের কাছ থেকে পাওয়া। কিন্তু হত্যার পরিকল্পনা নিজের। খুনের ধরনও একই।

সেই সিরিয়াল কিলারের নাম আব্দুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না (২৩)। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার বারকোটা ভূঁইয়া বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

তাঁর সঙ্গে দীন ইসলাম দীনু (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

দুই আসামিকেই গতকাল সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানাধীন সুরগাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই সঙ্গে উদ্ঘাটন করা হয় কুমিল্লা জেলা সদর দক্ষিণ থানার বহুল আলোচিত পান্না আক্তার ও লাইলী বেগম হত্যা মামলার রহস্য।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত পান্নার মা মোছা. শরীফা বেগম বাদী হয়ে ২৫ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলা এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগী পান্না আক্তারের মরদেহ ২০ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বিছানার চাদরে পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর দুই চোখে আঘাতের ও নিচের ঠোঁটে কাটার চিহ্ন ছিল। লাশের গলা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শক্তভাবে মোড়ানো ছিল। এ ছাড়া দুটি ওড়না দিয়ে হাত এবং দুটি প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে পা বাঁধা ছিল।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য খুঁজে বের করতে ও আসামিদের গ্রেপ্তারে পিবিআই কুমিল্লা জেলা মামলার ছায়া তদন্তকালে সদর দক্ষিণ থানা-পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে এবং পরে নিজ উদ্যোগে তদন্তের দায়িত্ব নেয়।

এদিকে ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার আমতলী (ধর্মপুর) গ্রামের মো. জনির স্ত্রী ভুক্তভোগী লিলি বেগমকে (২৮) অপহরণের অভিযোগে তাঁর মা শাহনূর বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

২৬ অক্টোবর আদালত পিবিআই কুমিল্লা জেলা প্রধানকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম-এর তত্ত্বাবধানে মামলা দুটি তদন্ত শুরু হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভুক্তভোগী পান্না আক্তারের মোবাইল নম্বর থেকে আসামির ফোনে এলে তাঁদের পরিচয় হয়। অভিযুক্ত মুন্না ভুক্তভোগীকে বিয়ের প্রলোভন দেখানোয় স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই নারীকে মুন্নার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন অভিযুক্তরা।

ভুক্তভোগীর কাছ থেকে আগের দাবি অনুযায়ী কোনো টাকা না পাওয়ায় মুন্না ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর গলা, হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ চাদরে মুড়িয়ে রাখেন। পরে চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে লাশ বস্তাবন্দী করে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে সদর দক্ষিণ থানাধীন গোপিনাথপুর সার্কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী মহাসড়কের উত্তর পাশে, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজের বিপরীত পাশে ফেলে দেয়।

এরও আগে এক মাস আগে অভিযুক্ত মুন্না তাঁর বন্ধু পারভেজ সঞ্জীবের সহযোগিতায় ভুক্তভোগী লিলি বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। এই সম্পর্কের জেরে ভুক্তভোগী ২ সেপ্টেম্বর ২০ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে জাগরঝিল এলাকায় আসেন। অভিযুক্ত মুন্না ও দ্বীন ইসলাম ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। পরে নিহতের লাশ ফেনী মডেল থানাধীন শর্শদী ইউপিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়।

ফেনী সদর মডেল থানা-পুলিশ ১৩ সেপ্টেম্বর নিহতের গলিত লাশ উদ্ধার করে এবং ফেনী সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।

মুন্না ও দ্বীন ইসলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, পারভেজের সহায়তায় ভুক্তভোগীকে অপহরণ করে হত্যা করে।

এ বিষয়ে পিবিআই কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একটি কুলস হত্যা মামলা। আমাদের সদস্যদের আন্তরিকতা এবং আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আসামিদের আদালতে পাঠানো হলে তাঁরা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।